লাইফ স্টাইল

বিয়ের কথা বললে…

20ananda-plus4বিয়ের কথা বললে…
বিয়ের মরসুম সবে মিটল! একদল কিন্তু পণ করে আছেন
বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন না। কারণটা কী? খোঁজ নিলেন রেশমি বাগচী।
প্রেম করলেই বিয়ে করতে হবে নাকি? একটু দেখাশোনা, একটু লং ড্রাইভ, একটু ইটিং আউট, হাল্কা শরীরী রসেবশে থাকা এ সব নিয়েই এখন প্রেমের প্যাকেজ। বিয়ে কোনও এক সময় করলেই হবে। তাতে সম্পর্ক ভেঙে যায় যাক। নতুন বন্ধু বা বান্ধবী জুটতে কত ক্ষণ? দু’পক্ষই যদি এই দর্শনে বিশ্বাস করেন সমস্যা নেই। কিন্তু কোনও এক পক্ষ যদি বিয়ে চায়, তা হলেই মুশকিল।

ধোঁয়াশার নাম বিয়ে
নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা, কেরিয়ারের ভাবনায় অনেক সময়ই বিয়ে পেছনের সিটে চলে যায়। হয়তো ভাবছেন, নিজের সঙ্গে আপস করার সময় পান না। অন্য কেউ জীবনে এলে তাঁর সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে চলবেন? মনোবিশেষজ্ঞ ঝুমা বসাক খেয়াল করেছেন, বিয়ে নিয়ে সমস্যা যতই থাকুক, বিয়ে করার প্রবণতা এতটুকুও কমেনি। বিয়ে নিয়ে মানুষের ফ্যান্টাসিই বিয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়, প্রেমে পড়তে শেখায়। ‘হম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘বিবাহ’, ‘হম সাথ সাথ হ্যায়’-এর মতো সিনেমাগুলোতে শুরু থেকে শেষ বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে! ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’য়ে কিন্তু এখনকার জেনারেশনের প্রেম আর প্রেম-পরবর্তী পর্যায়ের ব্যাপারটাও সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’: সুশান্ত সিংহ রাজপুত-পরিণীতি চোপড়া
মনোবিদরা যাই বলুন, বাস্তব সমীক্ষা কিন্তু বলছে নতুন প্রজন্মের কাছে বিয়ে একটা প্রচণ্ড ধোঁয়াশা। বিয়ের কথা অনেকেই ভাবতে চাইছেন বত্রিশ-তেত্রিশে গিয়ে। কেউ বা আরও পরে। অন্যের বিয়েতে গিয়ে হুল্লোড় করতে এক পায়ে খাড়া অভিনেত্রী তনুশ্রী। কিন্তু নিজের বিয়ে নিয়ে ভাবলেই তাঁর বেশ লজ্জালজ্জা লাগে। এই লজ্জাবোধই কি বিয়ের স্বপ্নটাকে জিইয়ে রাখতে সাহায্য করে? “অবশ্যই স্বপ্নের জন্ম হয়। মনে হয় দেরি করেই বিয়ে হোক। কিন্তু যার সঙ্গে বিয়ে হবে সে যেন মনের মানুষ হতে পারে। অল্প আলাপে বিয়ে করে, দু’ দিন বাদে সব উত্তেজনা চলে গিয়ে ডিভোর্স তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার,” বলছেন মনোবিদ ঝুমা। অভিনেত্রী পার্নো যেমন স্বপ্ন দেখেন হাঁটু গেড়ে সুপুরুষ রাজকুমার আংটি পরিয়ে দিচ্ছে তাঁকে! আইডিয়াল পুরুষ সামনে এলে দু’দিনের প্রেমেই বিয়ে করতে রাজি হবেন তিনি! কিন্তু জানেন না কবে সেই পুরুষের বাঁধনে ধরা দেবেন।

বিয়ের পর সব পাল্টে যাবে না তো
বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজন, ধরেই নেন, প্রেম করছে মানেই পরের ধাপ বিয়ে। প্রেমে বিয়ের সুবিধে হল, প্রেম করলে প্রেমিক/প্রেমিকা সম্পর্কে, তাঁর মানসিকতা, তাঁর স্বভাব, তাঁর পজিটিভ, নেগেটিভ পয়েন্টগুলো জেনে বুঝে নিতে পারেন। এই সবের সঙ্গে আপনি কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, সেটা বোঝার যথেষ্ট সময় পান।
প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী, এই পথটা পেরোতে অনেকটা সময় লাগে। ভয় হয়, বিয়ের পর সব পাল্টে যাবে না তো? এই ভয়ই বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে বলে ধারণা জেন ওয়াই পাত্রপাত্রীদের।

প্রেমের ভারও কম নয়
একটা খুব সুন্দর ছবি দেখলেন। দেখে বাহবা দিলেন, আর নিজে সেই জায়গাটায় বেড়াতে গেলেন। দু’টোর মধ্যে যা পার্থক্য, বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরের মধ্যে ঠিক সেই পার্থক্যই আছে। চূর্ণি গঙ্গোপাধ্যায়-কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় প্রেম করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। তার পর বিয়ে। পড়াশোনা, থিয়েটার, ওঠা-বসা সব একসঙ্গে। এই ভাবেই এক গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হন দু’জনে। প্রেম নিবেদন আলাদা করে করতে হয়নি। এমনিই হয়ে গিয়েছে। প্রেম করে বিয়ে মানেই ফেয়ারি টেল না। প্রথমত, টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হতেই হবে। সঙ্গে ধৈর্য, সহ্য আর ত্যাগ, এগুলিও প্রতিনিয়ত করতে হবে। তবে কোনওটাই আপনার কাছে চাপের মনে হবে না। প্রেমে ১০০% দিলে সবই সম্ভব, মনে করে তৃণা আর সাগ্নিক। ওঁদের আবার লং ডিসট্যান্স রিলেশন ছিল। সাগ্নিক মুম্বইবাসী, তৃণা কলকাতাবাসী। প্রেম করছেন ছয় মাস হল। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সামনের জানুয়ারিতে বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে ওঁদের।

লিভ-ইন, না ফরএভার ইন
ঝামেলা কে চায়, বলুন তো? প্রেম করে বিয়ে করলেন, তার পরও ঝগড়াঝাঁটি, মনোমালিন্য আপনার নিত্য সঙ্গী। যে জন্য বাবা-মায়ের পছন্দ করা পাত্রকে ছেড়ে নিজের পছন্দকে জীবনসঙ্গী করলেন, সেই কিনা এখন আপনাকে বুঝতে চাইছেন না। তা হলে কী করা? অগত্যা উপায় লিভ-ইন।
এক সময় লিভ-ইন রিলেশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়ে ওঠা রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এখন তাঁদের সন্তানের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। দু’বছরের প্রেম, দু’বছরের লিভ-ইন, তিন বছরের বৈবাহিক জীবন কাটিয়ে ফেলেছেন দু’জনে। ওঁরা লিভ-ইন করেছিলেন, একে অপরের কম্প্যাটিবিলিটি বোঝার জন্য। একসঙ্গে দু’ঘণ্টা থাকা, আর ২৪ ঘণ্টা থাকা এক নয়। ওঁরা বুঝতে চেয়েছিলেন, জীবনের অসুন্দর মুহূর্ত, দুঃখ, বেদনা, বিরক্তি এই সব অনুভূতির সঙ্গে কেমন ভাবে মানাতে পারছেন।
রাহুলের কথায়, “ফাইনাল পরীক্ষার আগে যেমন আমাদের প্রি-টেস্ট, টেস্ট হত, আমার কাছে লিভ ইনও সে রকমই একটা জরুরি প্রস্তুতি ছিল।” এত বছর একে অপরকে চেনেন ওঁরা। তবু এখনও অনেক নতুন নতুন ব্যাপার জানার বাকি আছে। নিজেরাই নিজেদের সারপ্রাইজ করেন।
আর একটা প্রশ্নও থেকে যায়। বিয়ে দেরিতে মানেই সন্তান আসতে আরও দেরি। গর্ভধারণে জটিলতা কিংবা পুরুষের দিক থেকেও সমস্যা তৈরি হতে পারে, আশঙ্কা অনেক অভিভাবকেরই।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর কিন্তু বললেন, “যাঁরা দেরিতে বিয়ে করবেন, তাঁদের তো তত দিনে এতটাই সচ্ছলতা হবে যে তাঁরা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ভ্রূণ বা ডিম সংরক্ষণ করে সন্তানও আনতে পারেন। ইচ্ছে করলে দত্তকও নিতে পারেন। দেরিতে বিয়ের জন্য দত্তক নেওয়ার প্রবণতাও তাই

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.