বিনম্র শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

আগস্ট ১৫, ২০১৫

15 Augastঢাকা জার্নাল: গভীর শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে জাতি স্মরণ করেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। জাতির পিতার প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে দেশব্যাপী পালিত হয়েছে জাতীয় শোক দিবস।

এবারের শোক দিবসে জনতার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে ফিরিয়ে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবি।

শনিবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে বঙ্গন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে সকাল থেকেই নামে শোকার্ত লাখো জনতার ঢল।সকাল সাড়ে ৬টার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর।

এরপর একে একে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও  সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী সভাপতি হিসেবে দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানাওপরে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে  আসতে থাকেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী,ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী-শিক্ষক, সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লাখ লাখ মানুষ।

রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার জনতার স্রোত এসে মিশতে থাকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। রাসেল স্কয়ার থেকে ৩২ নম্বর সড়ক জুড়ে পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।

কালো ব্যাচ ধারণ করে সারিবদ্ধভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান তারা। জনতার মুখে মুখে এ সময় বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি উঠতে থাকে। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরানিত করা এবং রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি উঠে শোকার্ত মানুষের পক্ষ থেকে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকারও ব্যক্ত হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জনতা।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের পাশাপাশি লাখো জনতার স্রোত ছুটে চলে বনানী কবরস্থানে। সেখানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য শহীদদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিতে। সেখানে তিনি ফুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধুর সমাধিতেও নামে জনতার ঢল।

হুইল চেয়ারে বসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম মোস্তফা বীরবিক্রম বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘’৭১ সালের ৭ মার্চই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার সেই ডাকেই আমরা যুদ্ধ করেছি। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এটা আমার দাবি, এটা আমরা দেখে যেতে চাই।’’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে দেশি-বিদেশি ঘাতকচক্র নির্মমভাবে হত্যা করে। প্রতি বছরই দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ বছর বঙ্গবন্ধুর ৪০ তম শাহাদাৎ বাষির্কী। দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। দিনের শুরুতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সকল শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আগস্টের প্রথম দিন থেকে ৪০ দিন ব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে।

রাজধানী জুড়েই শোকাবহ পরিবেশে দিবসটি পালিত হয়েছে শনিবার। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় বেজেছে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম…….মুক্তির সংগ্রাম।’ বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান-‘যদি রাত পোহালে শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই……..বিশ্ব পেতো এক মহান নেতা আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা, শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে………।’বাজতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের গান। অনুষ্ঠিত হয় কোরআনখানি দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। দুপুরে পাড়া-মহল্লায় অস্বচ্ছল ও দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয় রান্না করা খাবার। বাদ জোহর মসজিদে বঙ্গবন্ধুর জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ওড়ানো শোকের প্রতীক কালো পতাকা। লাগানো হয় শোকের ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড।তৈরি করা হয় তোরণ।

শোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে পালন করা হয় বিভিন্ন কর্মসূচি।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৫, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.