বিদেশে নালিশ করে লাভ হবে না: প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা জার্নাল: শ্রমিক নেতা সেজে যারা বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশ করেন, তাদের উদ্দেশে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যক্তি আছেন, তারা নেতা সেজে বসে আছেন। একটি টিকিটের জন্য কিছু হলেই তারা বিদেশিদের কাছে নালিশ করেন। তাদের বলছি, আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি, বাইরে নালিশ করে বেশি সুবিধা হবে না।’ মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নিহত শ্রমিকদের পরিবার, আহত শ্রমিক ও শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মাঝে চেক বিতরণ করেন।
আলোচনা সভায় শ্রমিক নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, কিছু কিছু শ্রমিক নেতা সেজে শ্রমিকদের ওপর খরবদারি করেন। কোনও কিছু হলেই বিদেশিদের কাছে গিয়ে নালিশ করেন। দেশের বদনামটা তুলে ধরেন। আর এই বদনাম করতে গিয়ে হয়তো একখানা টিকিট বিনা পয়সায় পান। বিদেশে থাকার একটু সুযোগ পান। একটু যেতে পারেন। সামান্য সুযোগের জন্য দেশের বদনামটা বাইরে গিয়ে করাটা নিজের দেশের জন্য যে কত ক্ষতিকর, সেটা তাদের অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশটা আমাদের। এই দেশটাকে আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। দেশটা আমাদের, আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। দেশটি যতই উন্নয়ন হবে। ততই আমাদের কল্যাণ হবে। এই কথাটি বুঝতে হবে। দেশপ্রেম থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশকে গড়ে তুলতে চাই। দেশের মেহনতি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আমাদের সরকারের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু দেশের সব শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার রাজনীতি হলো, এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য। আমি তেল মাথায় তেল দিতে আসিনি। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি।শিল্প প্রতিষ্ঠানের শান্তি রক্ষার জন্য আমরা কাজ করছি। শ্রমজীবী মানুষের উন্নয়নে কাজ করছি। তাদের জন্য তহবিল গঠন করা হয়েছে। বন্ধ কলকারখানা আমরা চালু করছি।’
মালিক-শ্রমিকদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আন্তর্জাতিক চাপ আছে। বাইরে থেকে কেউ উসাকি দিলো, অমনি সেখানে শুরু হয়ে গেল তাণ্ডব, এই ঘটনা যেন কখনও না ঘটে। সেই ব্যাপারে আমি সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছি। আমি বলব, নিজের চাকরি ও কাজের ক্ষেত্র যেন কোনোমতেই ধ্বংস না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।’
শ্রমিক ও মলিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমি শ্রমজীবীদের বলব, যে কারখানা আপনার রোজগারের ব্যবস্থা করে। আপনার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে। সেই কারখানা যেন ঠিকমতো চলে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সেখানে যেন কোনও অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে অনুরোধ করবো। একটা ভরসা রাখবেন, আপনাদের কোনও অসুবিধা হলে আমি তো আছি। আমি নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। আপনাদের ভাগ্য গড়তে এসেছি। আপনাদের কোনো সমস্যা হলে আমি দেখবো। আর মালিকদের প্রতি আমার অনুরোধ, যে শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আপনার জন্য উৎপাদন করেন। আপনি ব্যবসা করেন। আপনি ও আপনার পরিবার ভালো থাকে সেই শ্রমজীবী মানুষের প্রতিও আপনাদের আন্তরিক হতে হবে। তাদের প্রতি কর্তব্যে কোনও ত্রুটি না হয় তা দেখতে হবে।’
মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কোন এলাকায় মানুষ গৃহহারা, তার হিসাব আমার কাছে রয়েছে। সেই হিসাব অনুযায়ী আমি গৃহনির্মাণ করে যাচ্ছি। আমরা শিল্পয়ান যেমনটি করবো। কৃষি যেন নষ্ট না হয়, সেই লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য রেখেই কাজ করছি।আওয়ামী লীগ নিজের সেবা নয়, দেশের মানুষের সেবার জন্য ক্ষমতায় আসবে।’ তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশে যান তাদের বলবো, দালালের খপ্পরে পড়ে সোনার হরিণ ধরা জন্য বিদেশে পাড়ি না জমান। সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ বিদেশে গিয়ে যে কষ্টটা তারা পান, যে মানবেতর জীবন-যাপন করেন তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি।’
কবি নজরুলের কবিতার পাঠ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ মানুষই। মানুষের অধিকার সবারই ওপরে। মানুষের কল্যাণ করা সবার দায়িত্ব। কাউকে ছোট করে দেখা নয়। সবার সম্মান দিতে হবে। এটাই মানুষের ধর্ম। মেহনতি শ্রমিক-কৃষক-মজুরের জন্যই আমাদের রাজনীতি। তাদের ভাগ্য পর্বিতন হলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে যাবে। সব শ্রমিক-মজুরের কাছে দেশ গড়ার কাছে সহযোগিতা চাই।’
ঢাকা জার্নাল, মে ১, ২০১৮।