Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বিদেশিদের তালিকা চেয়ে এনবিআরের চিঠি

NBRঢাকা জার্নাল : বাংলাদেশে অবস্থানকরা বৈধ ও অবৈধ সকল বিদেশির তালিকা চেয়ে তিন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা স্বাক্ষরিত চিঠি সম্প্রতি বিনিয়োগ বোর্ড, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (বেপজা) প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের একটি সূত্র  তা নিশ্চিত করেছে।

চিঠিতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে থাকা বিদেশিদের তালিকা, যে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত তার নাম, সেলারি সিট ও বিদেশিদের স্থায়ী ঠিকানাসহ সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সরবরাহ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানান, দেশে জ্বালানি, পোশাক ও উৎপাদনশীল খাতের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। নির্মাণ খাতে বিদেশি  নাগরিকদের অংশগ্রহণ কোনো অংশে কম নয়।

তৈরি পোশাক খাতের মধ্যম স্তরে রয়েছে অনেক বিদেশি, যাদের অধিকাংশই টেকনিক্যাল কর্মী। টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠানে, বহুজাতিক প্রসাধনী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানেও অনেক অনাবাসী কাজ করছেন। এসব কর্মী দেশীয় কর্মীদের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করলেও তারা কর দেন না।

সূত্র আরো জানান, নিয়মানুযায়ী বিনিয়োগ বোর্ড অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে যথাযথ নিবন্ধনের মাধ্যমে বিদেশিদের দেশে কাজ করার কথা। বর্তমানে এমন নিবন্ধিত কর্মীর সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ হাজার। কিন্তু এনবিআরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশির সংখ্যা লক্ষাধিক। বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে তারা হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া অনেক বিদেশি দেশীয় অনেক উদ্যোক্তার সঙ্গে যৌথভাবে পোশাক খাতের বায়িং হাউজসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডে নিবন্ধন নেওয়ার কথা থাকলেও দেশীয় উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

পাশাপাশি নানা খরচ দেখিয়ে অর্থ পাচার করছেন তারা। নিজেদের লভ্যাংশও ব্যাংকিং মাধ্যমে না নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে এমন অবৈধ বিদেশি কর্মীর সংখ্যা অনেক বেশি বলেও এনবিআর সূত্রে জানান।

আর এসব ব্যক্তির কাছ থেকে কর আদায়ে এবার আট-ঘাট বেঁধে নেমেছে এনবিআর। ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট ও অর্থ আইনে বিদেশিদের কাছ থেকে কর আদায়ে ১৮৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়েছে।

যেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার প্রতিষ্ঠানে বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে চাইলে অবশ্যই তাদের বিনিয়োগ বোর্ডসহ দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। আয় বর্ষের যে সময়েই কোনো বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করুক না কেন, তাদের কর দিতেই হবে। আর কোনো প্রতিষ্ঠান যদি অবৈধভাবে বিদেশিদের কাজ করার অনৈতিক সুযোগ দেয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানকে স্বাভাবিকের তুলনায় ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত কর দিতে হবে। অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ দুটির মধ্যে যেটির পরিমাণ বেশি হবে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সেটি আদায় করা হবে।

এনবিআরের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইসি সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কর্মী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিদেশি দূতাবাস, হাইকমিশন ও মিশনে কর্মরত কর্মকর্তারা খণ্ডকালীন ক্লাস নিয়ে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করেন। কিন্তু এ অর্থ কখনই করের আওতায় আসে না। অনেক সময় উপযুক্ত উৎসবহির্ভূত অর্থসহ বিদেশি নাগরিকের বিমানবন্দরে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটে।

পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে অনেক বিদেশি চিকিৎসক খণ্ডকালীন সেবা দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যান। তারাও কোনো কর দেন না। এ ধরনের চিকিৎসকের আয় থেকেও কর আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

এ ছাড়া বিদেশি শিল্পীরা, যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে যে অর্থ উপার্জন করেন, তা থেকে ৩০ শতাংশ হারে কর কর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.