বিজয় দিবসের আনন্দে যোগ হল হাতিরঝিলের ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’
ঢাকা জার্নাল : বিজয় দিবসে রাজধানীর হাতিরঝিলে চালু হল ওয়াটার ট্যাক্সি; নগরবাসীর জন্য পরিবহন ব্যবস্থায় যুক্ত হল আরেকটি নতুন বাহন।
প্রথম দিন কর্তৃপক্ষ দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে এই নৌযানে চড়ার সুযোগ দিলেও ভিড় সামলাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত টিকেট কিনে আনার অনুরোধ জানায়।
হাতিরঝিলের এফডিসি মোড় প্রান্ত থেকে রামপুরা ও বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত চলাচল করবে ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো। এফডিসি মোড় থেকে রামপুরা ২৫ টাকা এবং বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হবে যাত্রীদের।
ওই ভাড়া গুণেই প্রথম দিন ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়েছেন বিজয় দিবসে ঢাকার অন্যতম এই বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা বহু মানুষ। তাদের বিশ্বাস, শখের বাহন হিসেবে নয়, প্রতিদিনের চলাচলের মাধ্যম হিসেবেই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ওয়াটার ট্যাক্সি।
হাতিরঝিলের মেরুল বাড্ডা অংশ থেকে নতুন এ নৌযানের চলাচল উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এ এলাকার চেহারা পাল্টে গেছে।
এ এলাকার গুরুত্ব আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় হাতিরঝিলে একটি থানা করার ভাবনার কথাও অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে ভালো দাবি করে মন্ত্রী বলেন, “ঢাকা শহরে আগের মতো মাস্তানি নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আছে।”
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ছুটির দিনে সন্তানদের নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে এসেছিলেন রামপুরার বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দিন। উদ্বোধনের পর লাইনের প্রথম দিকে ছিলেন বলে সবাইকে নিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে পেরেছেন তিনি।
নাসির বলেন, “ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো নামানোয় খু্বই ভালো হয়েছে। রামপুরা থেকে কারওয়ানবাজার বা ওইদিকে যাওয়ার কোনো রিকশা নেই। যে পরিমাণ বাস চলে তাও অপর্যাপ্ত। এখন সমস্যা হবে না আশা করি।”
ভাইবোন আর ভাগ্নেকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন উত্তরার বাসিন্দা মো. রায়হান মিয়া। কমলা আর সাদা রঙের ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো হাতিরঝিলের আকর্ষণ আরও বাড়াবে বলেই তার বিশ্বাস।
“এখানে প্রায়ই ঘুরতে আসি। আগে হাতিরঝিলের পাশের সড়ক দিয়ে ঘুরে চলে যেতাম। এখন পানিতেও ভেসে বেড়াতে পারব।”
এ ধরনের সেবা রাজধানীবাসীর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা বলে মন্তব্য করলেন আজিমপুর গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার।
“এখন বাসা থেকে সহজে যাতায়াত করা যাবে। আগে বাসে করে যেতাম। যানজটের কারণে অনেক সময় নষ্ট হত। ওয়াটার ট্যাক্সির ভাড়াটা বাসের চেয়ে বেশি। তবে সময় আর ঝামেলা কমলে ভালোই হবে।”
ওয়াটার ট্যাক্সিগুলোতে একবারে উঠতে পারেন ৪৫ জন যাত্রী। ভেতরে আছে ছোট একটি ক্যান্টিন, যেখানে কেক, বিস্কুট ও হালকা খাবার পাওয়া যাবে।
হাতিরঝিলের এফডিসি অংশে এ ট্যাক্সিগুলোর টার্মিনাল থাকবে। সেখান থেকে ছাড়ার আধাঘণ্টার মধ্যেই সেগুলো গন্তব্যে পৌঁছে যাবে বলে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মেজর কাজী শাকিল হোসেন জানিয়েছেন।
এসব ওয়াটার ট্যাক্সির কাঠামো তৈরি করা হয়েছে চট্টগ্রামের একটি কারখানায়; ইঞ্জিন এসেছে চীন থেকে। প্রতিটি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা।
২০ বছরের জন্য এই ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স ওয়াহিদ মিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ ডিসেম্বর চারটি ওয়াটার ট্যাক্সি ঢাকায় আনার পর পানিতে নামিয়ে সেগুলোতে ইঞ্জিন ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ যুক্ত করা হয়। মাসখানের মধ্যে আরও দুটি ওয়াটার ট্যাক্সি হাতিরঝিলে নামার কথা রয়েছে।
এই সেবা চালুর ফলে বাড্ডা, গুলশান, রামপুরা, খিলগাঁওসহ নগরীর পূর্বাংশের মানুষ কারওয়ান বাজার, মগবাজার, দিলু রোড, ইস্কাটন, বাংলামোটর, তেজগাঁও এলাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।
এতে করে রাজধানীর একটি বড় অংশের লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছেন রাজউক ও হাতিরঝিল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬।