শীর্ষ সংবাদসব সংবাদ

বিচারপতির অভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ বন্ধ

ঢাকা জার্নাল : গত ১৩ জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক মারা যাওয়ার পর আদালত আর কোনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। নতুন বিচারপতি নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এখনও হাইকোর্টে কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস বলছে, সহসাই নিয়োগের কোনও আভাস দেখা যাচ্ছে না। এর জন্য আরও সময় লাগবে। সব মিলিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন খোদ প্রসিকিউটররাই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক মারা যান ২০১৭ সালে। ট্রাইব্যুনাল (অ্যাক্ট) আইন অনুযায়ী, তিনজন বিচারপতির মধ্যে একজন বিচারপতির অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম চলবে না। সে হিসাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে না। নিয়মানুযায়ী বিচারপতি নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়, তিনি একজন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেন। এখনও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেই চিঠিটিই পাঠানো হয়নি। ফলে কবে নাগাদ পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করা সম্ভব হবে সে নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক বলেন, ‘আইনমন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। তিনি এলে আমরা বিচারক নিয়োগের বিষয়ে  হাইকোর্টে চিঠি পাঠাবো।’

চেয়ারম্যানের মৃত্যুর ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে জরুরি ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে গত দেড় মাসে আদালত বসেনি। যে আশা আকাঙ্ক্ষার মধ্যদিয়ে এই বিচার শুরু হয়েছিল, সেটি স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন দু’টি ট্রাইব্যুনাল ছিল তখন সেখানে ২২টি মামলা ছিল, আর এখন ৩৩টি মামলা রয়েছে।এ পরিস্থিতিতে একমাস পিছিয়ে যাওয়া অনেক ক্ষতির। কেননা বারবারই আমরা বলে আসছি, এ মামলার সাক্ষীরা অনেক বয়স্ক এবং তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হয়।’

প্রসিকিউশন অফিসের তথ্য মতে, বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ৩৩টি মামলায় ১৪১ আসামির বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন। ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ২৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, রায় ঘোষণার জন্য গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া (৬৫) ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে করা এক মামলায় শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রয়েছে। নিয়মানুযায়ী, ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে ‘সিএভি’ (রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ) মামলার পুনরায় যুক্তিতর্ক শুনতে হবে। এছাড়া নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত যেসব মামলার অভিযোগ আমলে নেওয়ার জন্য রয়েছে, তার আদেশ দেওয়া যাবে না।

ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ডেপুটি রেজিস্ট্রার কেশব রায় বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক মারা যাওয়ার পর কোনও মামলার শুনানি হয়নি। এসময় কালে যেসব মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল, তা আবার শুনানির জন্য বিচারকরা চেম্বারে বসেই নতুন করে তারিখ ঠিক করে দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘খুব শিগগিরই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন কোনও আভাস আমরা পাইনি। এখন নতুন করে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে তা পুনর্গঠন করা হলে আবারও মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।’

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যেই ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পর তা পুনর্গঠন করা হবে। এরপর গত সপ্তাহে আইনমন্ত্রী আবারও বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যেই চেয়ারম্যান নিয়োগ করে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে।’ আইনমন্ত্রী বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২৯, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.