Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে চলছে নতুন ফরম বিতরণ

39ঢাকা: অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ রাখতে রাজধানীতে বসবাসকারীদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সিলযুক্ত ফরম বিতরণ করছে থানা পুলিশ। এর আগে গত মাসে পুলিশের বিতরণ করা ফরমে কোনো মনোগ্রাম বা সিল ছিল না।

রাজধানীর বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যে কারণে পুরনো ফরম দিয়েই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে ডিএমপি সূত্রে জানা যায়।

ডিএমপির তথ্য ফরম প্রসঙ্গে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার বাড়িওয়ালা ইদ্রিস মোল্লা বলেন, ‘নাগরিকদের তথ্য নেওয়া ফরমে পুলিশের কোনো সিল নেই। যেভাবে বিভিন্ন স্থানে ভুয়া পুলিশ ধরা পড়ছে, তাতে সন্দেহ হয়।’

এ বিষয়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, একজন পুলিশ অফিসার বাড়িওয়ালাদের ফরম দিচ্ছেন। এখানে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। আর যদি কারও (বাড়িওয়ালা) সন্দেহ হয় তাহলে ওই অফিসার সম্পর্কে থানায় গিয়ে জানতে পারবেন। অথবা ওই অফিসারকে জিজ্ঞেস করতে পারবেন তার পরিচয় সম্পর্কে।

নির্ভয়ে জনগণ এ ফরম পূরণ করে দিতে পারেন। কারণ ভুয়া পুলিশ বা গোয়েন্দা পুলিশ রাস্তা থেকে মানুষ তুলে নিয়ে যায়। তারা বাসায় বাসায় গিয়ে ফরম বিতরণ করবেন না, বলেন মুনতাসিরুল ইসলাম।

পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়িওয়ালাদের বলা হচ্ছে, বাড়িভাড়া দেওয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের সব তথ্য যেনো সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু পুলিশের এই পদক্ষেপ বাড়িওয়ালাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেক বাড়ি মালিকের বক্তব্য, পুলিশ বারবার বাড়ি মালিকদের ভোগান্তিতে ফেলছে।

কোনো বাড়িতে অপরাধ সংঘটিত হলে কিংবা অপরাধী ধরা পড়লে ওই বাড়ির মালিক, দারোয়ান এবং অন্য ভাড়াটিয়ারা ভোগান্তিতে পড়েন। এজন্য আগে থেকে সচেতন থাকলে ভোগান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছে পুলিশ।

এজন্য বাসার কাজের লোক, গাড়ি ড্রাইভারদেরও তথ্য ওই ফরমে লিপিবদ্ধ করে থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভাড়াবাড়ি ব্যবহার করে দুষ্কৃতিকারীরা বিভিন্ন অপরাধের পরিকল্পনা করছে এবং সেগুলো তারা বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে জঙ্গি কর্মকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে নাশকতা, বাড়ির মালিক বা তাদের স্বজনদের অপহরণ, বাড়িতে খুন ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রতিরোধে তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াসহ কারা হোটেলে থাকছেন, ওই এলাকায় কোনো বিশেষ স্থাপনা রয়েছে কি-না এসব বিষয়ে খোঁজ রাখবেন।

এছাড়া সংশ্লিষ্ট এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক কারা, কোচিং সেন্টারে কি পড়ানো হয়, কয়টি বস্তি আছে, বস্তির মালিক কে বা কারা ও ভাড়াটিয়াদের বিষয়েও খোঁজ রাখবে পুলিশ।

ঢাকার একাধিক থানা এলাকা সরেজমিনে ঘুরে বাড়িওয়ালাদের থেকে জানা গেছে, অপরাধীরা যেনো বাসাভাড়া নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের সব তথ্য সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি নিবন্ধন ফরম দিচ্ছে পুলিশ।

খিলগাঁও এলাকার বাড়ির মালিক বাপ্পা সরকার জানান, ‘পুলিশ দুই ধরনের ফরম দিয়ে গেছে। একটি বাড়ি বা ফ্ল্যাট মালিকদের জন্য। অন্যটি ভাড়াটিয়াদের জন্য। তবে বাড়িতে যদি মেসভাড়া দেওয়া থাকে তাহলে ব্যাচেলরদের তথ্য প্রতিটি ফরমে আলাদাভাবে দিতে বলা হয়েছে।

তথ্য ফরম প্রসঙ্গে রামপুরা থানার তিন নম্বর বিট ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম জানান, বাড়ি মালিক-ভাড়াটিয়াদের ছবি, নাম-পরিচয়, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম, ভোটার আইডিকার্ড, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডিকার্ড, অফিসিয়াল আইডি কার্ডের কপি ফরমের মাধ্যমে থানায় জমা দিতে হবে।

এছাড়া ফরমে বাড়ির নম্বর, কোন বাড়িটি কোন রাস্তায় কিংবা কোন গলিতে তা উল্লেখ করতে হবে। বাড়িটি কতো তলাবিশিষ্ট, ওই বাড়িতে কতো লোকের বসবাস, তাদের নাম-পরিচয়, পেশা, মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় বিষয় উল্লেখ করতে হবে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ডের কপি থানায় জমা দিতে হবে বলেও জানান সাইদুল ইসলাম।

রামপুরা এলাকার ভাড়াটিয়া বিজয় কুণ্ডু বলেন, ‘ডিএমপির এ পদক্ষেপে রাজধানীতে যদি অপরাধ কমে ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে তাহলে আমরা স্বাগত জানাই।’

তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কারণে কোনো নাগরিক সমস্যায় না পড়েন সে বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজর রাখার পরামর্শ দেন বিজয়।

ডিসেম্বর ১১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.