সংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

বাড়ছে মধ্যবিত্তের হার, বর্তমানে ২০ শতাংশ

37ঢাকা: বর্তমানে দেশে ২০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। অব্যাহতভাবে এই হার বেড়ে চলেছে। ২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে।
বৃহস্পতিবার (০৫ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বিগত এক বছরের তাদের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ বিষয়ক এক সেমিনারে এ তথ্য জানায়। সকালে বিআইডিএস-এর সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে তিনটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়ে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘মধ্যবিত্ত শ্রেণি নির্ধারণে সর্বজনস্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। সাধারণত কারো দৈনিক আয় দুই ডলার থেকে তিন ডলার হলে সে মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এ আয় তিন ডলার থেকে চার ডলারের মধ্যে হলে ওই ব্যক্তি উচ্চ মধ্যবিত্তের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ হিসেবে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে যেখানে ৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্ত ছিলেন এখন তা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০২৫ সালে তা ২৫ শতাংশ এবং ২০৩৩ সালে ৩৩ শতাংশ মানুষ মধ্যশ্রেণিভুক্ত হবেন।

বিনায়ক সেন বলেন,‘ভারতে বর্তমানে মধ্যবিত্ত শ্রেণি ২৪ দশমিক ১ শতাংশ, দক্ষিন এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে এ সংখ্যা ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অপরদিকে চীনে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তা ৫৯ দশমিক ৩ শতাংষ ও ল্যাটিন আমেরিকা ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন বড় ধরনের আন্দোলন কার্যক্রম শুধু শ্রমিক শ্রেণির ওপর নির্ভর করে না বরং মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণের ওপরও তা নির্ভর করে।’

মধ্যবিত্ত শ্রেণি এখন আর শুধুমাত্র চাকরি নির্ভর নয় উল্লেখ করে বিনায়ক সেন বলেন, ‘মধ্যবিত্তের এক পঞ্চমাংশ এখন পেশায় ব্যবসায়ী।’

রেমিট্যান্স আয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকা একবারেই কম থাকায় গ্রামীণ আয়-বৈষম্য কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে বলেও বিনায়ক সেন তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন।

মধ্যবিত্তের আকার বড় হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মধ্যবিত্তের সম্পর্কে আমাদের তথ্য জানা দরকার। মধ্যবিত্ত যত শক্তিশালী হবে অর্থনীতি ততই টেকসই হবে। এজন্য সরকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবস্থার পরিবর্তন করে উপরের ধাপে নিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে।

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দ‍ারিদ্র্যে ভিন্নতা রয়েছে। যে প্রকল্প হাওরের জন্য প্রযোজ্য তা পার্বত্য এলাকার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। আমাদের এলাকা ভিত্তিক প্রকল্প হাতে নিতে হবে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করতে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে। এখনো আমরা বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে পারিনি। তাদের মূল স্রোতে আনতে পারিনি।’

তবে এসব কাজ করতে হলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সামান্য কিছু সংস্কার সাধন করলে রাজস্ব আহরণ আশি হাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা বেড়ে যাবে’।

মন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছেই কর পাওনা আছে। সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান কর না দিয়ে বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আদালতের আশ্রয় নেয় যাতে তাৎক্ষণিকভাবে কর না দিতে হয়।

এমন অবস্থা চলতে থাকলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে না বলেও মন্ত্রী এসময় উল্লেখ করেন। বৈদেশিক বিনিয়োগ না হওয়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন অনুমোদনে সময়ক্ষেপণকে দায়ী করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদ এর সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

দুপুরে অপর একটি অধিবেশনে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৩

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.