বাবরের অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ ডলারের উৎসের সন্ধান
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাওয়া ১০ লাখ মার্কিন ডলারের উৎসের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক জানিয়েছে ওই টাকা পাঠিয়েছে বাবরের ছোট ভাই মো. গোলাম রব্বানী।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে গোলাম রব্বানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খুঁজছে দুদক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০লাখ মার্কিন ডলার পাঠায় কানাবাবা ট্রেডিং লিমিটেড নামে আমদানি-রফতানীকারক একটি প্রতিষ্ঠান। এর সত্ত্বাধিকারী বাবরের ছোট ভাই আমেরিকা প্রবাসী মো. গোলাম রব্বানী। দুইটি ফরেইন ডিমান্ড ড্রাফ্ট (এফডিডি) এর মাধ্যমে ওই অর্থ পাঠানো হয়েছে। ২০০৭ সালের জুন মাসে এইচবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো হয়।
দুদক সূত্র জানায়, বাবরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০লাখ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে সাত কোটি টাকা। ওই অর্থের উৎসের খোঁজে গত বছরের জুন মাসে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
২০০৬ সালের শেষ নাগাদ সিঙ্গাপুরে এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশানের প্রাইম ব্যাংকে বাবরের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা হয়। অথচ বাবর ওই অর্থের উৎস কে তা জানাননি। তবে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় অর্থের উৎসের অনুসন্ধানে নামে দুদক।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেয়ে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে মির্জা জাহিদুল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের শেষ দিকে গুলশানের প্রাইম ব্যাংকে বাবরের অ্যাকাউন্টে সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় দুই দফায় ১০লাখ মার্কিন ডলার জমা হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায়, যা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। এ টাকা কীভাবে আয় করেছেন, তার কোনো তথ্য বাবরের দেওয়া আয়কর রিটার্নে নেই। এর আগে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতেও তা উল্লেখ করেননি তিনি। তাই ক্ষমতায় থাকাকালে বাবর কোনো অনৈতিক সুবিধা দিতে কোনো কোম্পানি কিংবা ব্যক্তির কাছ থেকে ওই অর্থ তার অ্যাকাউন্টে জমা নিয়েছিলেন কি-না তার জবাব খুঁজতেই দুদক অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, ১/১১’র সময় বাবরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা দায়ের করে দুদক। যেখানে সিঙ্গাপুর থেকে আসা ওই অর্থের বিষয়টি ছিল। যার হিসা্ব সেসময় দিতে পারেননি তিনি।
বাবরের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১১ জুলাই সাত কোটি ৯১ হাজার আটশ ৯৬ টাকার তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করে দুদক।
এ ছাড়া ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আট কোটি ছয় লাখ ৮০ হাজার একশ ২২ টাকার সম্পদের ওপর প্রযোজ্য আয়কর ফাঁকির মামলা করে এনবিআর। উভয় মামলাই আদালতে বিচারাধীন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অন্যান্য একাধিক মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে একটি অস্ত্র মামলায় ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাবরকে ১৭ বছর কারাদণ্ড এবং চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি তার ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৮ মে যৌথবাহিনী বাবরকে আটক করে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।