বাংলার আরেক মোহনলালের মুত্যু
ঢাকা জার্নাল: স্বার্থপর সমাজের ব্যাতিক্রমি পুরুষ আরেক মোহনলালকে হারালাম আমরা। বাংলার স্বাস্বধীনতা সূর্য রক্ষায় ১৭৫৭ সালে জীবন দিয়েছিলেন মোহনলাল। মীর জাফর আলী খান চরম বেঈমানী করলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রণ ক্ষেত্রে শত্রুর মেকাবিলা করে জীবন উৎসর্গ করেন তিন। বাঙ্গালী তার কথা আজও ভুলেনি। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে তার নাম।
বাংলার আরেক মোহনলাল ইজাজ ইদ্দিন আহমেদ কায়কোবাদ একজন মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে অকাতরেই প্রাণটি দিলেন। ইতিহাসের পাতায় তার নাম লেখা থাবে কী না তা ভবিষ্যতের বিষয়। কিন্তু বাংলার মানুষ তার জীবন উৎসর্গের কথা ভুলে যাবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এমন দুর্দিন আসলেই মনে পড়বে তার কথা, মানুষের জন্য কিভাবে জীবন বিলিয়ে দিতে হয় তার জলন্ত প্রমান এই কায়কোবাদ।
সাভারে রানা প্লাজায় উদ্ধার অভিযানকালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হলেও তাতে তার কোন কষ্ট দেখিনি। রানা প্লাজায় আটকে থাকা শাহিনাকে বাঁচাতে না পারার কষ্টই যেন তাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। কান্নায় চেখের জলে নিজের দুই চোখ ভাসায়নি, গোটা জাতিকে কাঁদিয়েছে। প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছে গোটা জাতির বিবেককে। দুর্ঘটনায় কায়কোবাদের মাধ্যমে মনুষত্যের যে বিজয় দেখেছে বাঙ্গালী, তা সব পরাজয়কে ছাপিয়ে গেছে।
ইজাজ উদ্দিন গত রোববার (২৮ এপ্রিল) রাতে সাভারে রানা প্লাজার ধ্বংস্তূপের ভেতর আটকা পড়া গার্মেন্টস কর্মী শাহিনা আকতারকে উদ্ধার করতে কংক্রিটের বিম কাটার চেষ্টাকালে গুরুতর আহত হন। সে সময় হঠাৎ জ্বলে ওঠা আগুনে অগ্নিদগ্ধ হলে ইজাজকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক ইজাজ উদ্দিন আহম্মেদ কায়কোবাদ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী জানান, শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ইজাজ।
এর আগে গুরুতর আহত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গত বুধবার ইজাজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। ইজাজকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুর থেকে আসা একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকার তার চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ বহন করে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে এ পর্যন্ত ৫৭২টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আরো বহু লাশ উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ঢাকা জার্নাল, সে ০৫, ২০১৩