Lead

বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব অঙ্গনে তুলে ধরতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিকাশে জোরালো উদ্যোগ নেবে, যাতে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ভুলে না যায়।

সরকারপ্রধান মঙ্গলবার (৪ জুলাই) তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং আরেকটি উদ্বোধনের সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যেমন আর্থসামাজিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিকভাবেও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো, যাতে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্ব অঙ্গনে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘তার সরকার সংস্কৃতির আরও উন্নতির জন্য প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবে আমাদের শিশুদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসগুলো সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে, যাতে তারা কখনোই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়।’

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংস্কৃতির উন্নতি ও বিকাশের জন্য অতীতের মতো প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার সে বিষয়ে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার ইতোমধ্যে ১৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। বাংলাদেশি সংস্কৃতির উন্নয়নে গত সাড়ে ১৪ বছরে আরও ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি অপর ৪১টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

কোনও দেশকে ধ্বংস করতে চাইলে সে দেশের সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। নিশ্চিত পরাজয় জেনেও মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল তারা।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সবসময় আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার ২০০৯ সাল থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক কাজকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব প্রযুক্তি দ্বারা আঁকড়ে আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জাতিকে আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তুলতে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক দর্শন দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হলে আমাদের দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। দেশব্যাপী ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও মানুষের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।’

তৃণমূল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক চর্চা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের অনেক লুকানো প্রতিভা রয়েছে। তাদের নিয়ে আমাদের প্রচার করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায় ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলো– গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের জন্য নতুন বহুতল ভবন, পুরান ঢাকা শহরের রোজ গার্ডেন, ঢাকায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভবন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার।

তিনি কপিরাইট কার্যালয়ের একটি নবনির্মিত ১২ তলা ভবনও উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।

সূত্র: বাসস