Lead

বাংলাদেশের পক্ষে স্পষ্ট বার্তা মোদির,‘আশ্বস্ত’ করেছেন শেখ হাসিনাকে

বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক পরম্পরা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার’ প্রতি ভারত বহু বছর ধরে যে জোরালো সমর্থন দিয়ে আসছে তা আগামী দিনেও পুরোপুরি অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সাত নম্বর লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে দুই জনের একান্ত আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে। বাংলা ট্রিবিউনের দিল্লি প্রতিনিধিকে ভারতের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হলে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই তার বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে শেখ হাসিনা যে বক্তব্য তুলে ধরেন এর সঙ্গেও নরেন্দ্র মোদি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করেছেন।

এর আগে, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এ সময় উভয় প্রধানমন্ত্রীর মাঝে একান্ত বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবারে দিল্লিতে এসেছেন জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনে স্বাগতিক দেশ ভারতের বিশেষ আমন্ত্রণে। আজ (শনিবার) জোটের নেতাদের মধ্যে মূল আলোচনাতেও তিনি অংশ নিচ্ছেন। তবে দিল্লিতে পা রাখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি গতকালই (শুক্রবার) নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন, যে বৈঠকে অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ হয়েছে বলে নরেন্দ্র মোদি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরের ‘টাইমিং’-টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – কারণ ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির গোড়াতেই বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন। গত তিনটি মেয়াদেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে এসেছে ভারত– ফলে এবারের নির্বাচনের আগে ভারত ঠিক কী ধরনের অবস্থান নেয় সে দিকেও পর্যবেক্ষকের সতর্ক নজর থাকছে।

এদিকে মাস কয়েক আগেই বাংলাদেশের জন্য আমেরিকা তাদের ‘ভিসানীতি’ ঘোষণা করার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, বাংলাদেশে ‘সুষ্ঠু ও অবাধ’ নির্বাচন নিশ্চিত করার নামে ওয়াশিংটন অতি-সক্রিয়তা দেখাচ্ছে কি না। ভারত যেহেতু মার্কিন এই ভিসানীতি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি, তাই এই বিষয়টিতে ভারতের অবস্থান কী তা নিয়েও নানা ধরনের জল্পনা সৃষ্টি হয়।

বস্তুত গত কয়েক সপ্তাহে ভারতের সংবাদমাধ্যমে এই ধরনের বহু রিপোর্টও বেরিয়েছে যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নে ভারত ও আমেরিকা আসলে একই মতের শরিক। সেই সব রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ঢাকাতে বিভ্রান্তি ও বিতর্কও কম হয়নি।

তবে গতকাল দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা আমাদের বুঝতে হবে যে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে কখনও কোনও ভুল বোঝাবুঝি ছিল না, এখনও নেই।’

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনায় সেই জিনিসটাই আরও একবার পরিষ্কার হয়ে গেছে বলেই তার অভিমত।

শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদির বাসভবনে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। সেই বৈঠকের মধ্যেই প্রায় ১৫/২০ মিনিট নিজেদের মধ্যে একান্তে কথাবার্তা বলেছেন দুই নেতা- যেখানে তারা নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করতে পেরেছেন।

বৈঠকের পরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টিকেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ভারতও এই বিষয়টিতে একমত হয়েছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের ‘বিটুইন দ্য লাইন’ ভেদ করলে এটাই দাঁড়ায়– যে বিগত দেড় দশকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশে যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছেন, তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে অপসারণের চেষ্টা করা হলে সেটা শুধু বাংলাদেশেই নয়– সমগ্র অঞ্চলে অস্থিরতা ডেকে আনবে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রসার ঘটবে, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

এই মূল্যায়নের সঙ্গে ভারতের একমত না হওয়ার কোনও কারণই নেই– আর তারা সেটা বাংলাদেশকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েও দিয়েছে।

তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা এটাও জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থেই নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে কোনওভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ব যাতে তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলার সুযোগ না পায় সেটাও নিশ্চিত করাটা খুব জরুরি। দুই নেতার মধ্যে আলাপে এই প্রসঙ্গটাও এসেছে।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে কিন্তু ভারত একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারকেই’ দেখতে চায় – আর সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশই নেই।

দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রের কথায়, পৃথিবীর সব দেশই চায় নিজেদের চারপাশে বন্ধু সরকার ক্ষমতায় থাকুক। আমরাও একই জিনিস চাই, তাতে তো কোনও অন্যায় নেই! আর কারা আমাদের বন্ধু, কারা ততটা নয় – সেটা চিনতে পারার ক্ষমতা তো আমাদের আছে, তাই না?

দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনাতেও ঠিক এই বার্তাটাই ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে দিল্লি পরিষ্কার করে দিয়েছে।