বসন্ত বরণে মেতেছে সবাই
ঢাকা জার্নাল: ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তরে উদাস সুরে বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি তবুও ফুটেছে জবা, দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।’
‘এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ, মন যেন দুপুরের ঘুর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে, মৃত্তিকার বুকে নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কি আনন্দ জাগানিয়া।’
নির্মলেন্দু গুণের এমন বসন্ত বন্দনায় হয়তো আজো ফুল ফুটেনি। বসন্তের আগমন ঘটলেও ফুলে ভরে ওঠেনি গাছ- গাছালি। গাছগুলোতে হয়তো নতুন মুকুল ফুটে ওঠেনি। গজায়নি নতুন পাতা। ‘তবুও ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্ত’।
বাসন্তী উৎসবে রঙিন হয়ে নতুন রূপে সেজেছে প্রকৃতি। উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো বাঙালি জাতি। চারুকলাসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নানা আয়োজনে মেতে ওঠেছে সবাই।
ঋতু বৈচিত্রের এ দেশে বাঙালির মনে-প্রাণে প্রতিটি ঋতুর প্রতিই থাকে গভীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা। এসবের মধ্যে অন্যতম ঋতুরাজ বসন্ত। বুকে সেই ভালবাসাকে ধারণ করে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ বসন্ত বরণে মেতেছে। কৃষ্ণচূড়া-পলাশের রাঙা হাসি, গান-নাচ ও ভালোবাসায় ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিয়েছে সব বয়সের নারী-পুরুষ।
রঙ্গিন সাজে বর্ণিল এ উৎসবে মেতেছে তরুণ-তরুণীরা। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সবুজ শ্যামল এই প্রকৃতি। লাল, হলুদ, বেগুনি নানান ফুলের সমাহার। চারিদিকে শুধু ফুলের মৌ মৌ সুগন্ধ।
রাজধানীর শাহবাগ, চারুকলা, বই মেলা, টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নর-নারীরা বাসন্তী সাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। রাস্তার দু’ধারে বসেছেন অনেক ফেরিওয়ালা। অনেক নারী ফুলের তৈরি গলার মালা, হাতের চুড়ি, মাথার ব্যান্ডসহ নানা অলংকারাদি নিয়ে ঘুরছেন বিক্রির জন্য।
ক্রেতারাও কিনেছেন তাদের মনের মতো ডিজাইনে গড়া এসব জিনিস। বাসন্তী পোশাকের সঙ্গে মানানসই ফুল আর চুড়ি না হলে চলে না। শাহবাগ থেকে শুরু করে টিএসসি, কলা ভবন এলাকায় বসেছে প্রায় অগনিত চুড়ির দোকান।
এর মধ্যে রেশমি ও কাচের খাঁজকাটা চুড়ি তরুণীদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সকালে বসন্ত বরণের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় এসরাজ বাজিয়ে। সকাল ১০টার পর বসন্ত শোভাযাত্রার মাধ্যমে শেষ হয় বসন্ত উৎসবের প্রথম পর্ব। বসন্ত উৎসবের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বকুলতলায় মূল মঞ্চে দলীয় নৃত্য, একক আবৃত্তি, সংগীতসহ বিভিন্ন আয়োজনে মাতোয়ারা হয়ে বসন্তের প্রথম সকাল। ভোর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী ও হাজারো বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে চারুকলা প্রাঙ্গণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, যতদিন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবের আয়োজন চলবে, ততদিন কোনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিজয়ী হতে পারবে না ।
ঢাকা জার্নাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।