সারাদেশ

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের সানুহার নামক এলাকায় রবিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মর্মান্তিক সড়ক দূঘটনায় ১০ নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে ১৪জনকে বরিশাল শেবাচিম ও তিনজনকে উজিরপুর উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দূর্ঘটনার পর পরই ঘাতক চালক পলিয়ে গেছে।

উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ জানিয়েছেন, ঢাকা থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াগামী যমুনা লাইন পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৯০৪৬) বাসটি ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সানুহার নামক এলাকায় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সাথে স্বজোরে ধাক্কা লেগে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। স্থানীয়রা বিকট শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে গিয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাসটি কেটে বাসের মধ্যে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করেন।

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি শেখ মোঃ বেলাল হোসেন জানান, দূর্ঘটনাকবলিত বাস থেকে আটজন, পাশের ডোবা থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় এবং শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাধব শীল (৪৫) নামের এক ব্যক্তি সকাল দশটার দিকে মারা গেছেন। তিনি উজিরপুর উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মনোরঞ্জন শীলের ছেলে।

অপর নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন-ঝালকাঠী সদর থানার নেয়রি গ্রামের মনির হাওলাদারের শিশু পুত্র আরাফাত হোসেন (৯), পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর ভেচকি গ্রামের কুদ্দুস আকনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫), একই গ্রামের রাকিব আকনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৩), বরগুনার বেতাগীর কাজিরাবাদ গ্রামের মোবারেক বেপারীর ছেলে আব্দুল হালিম (৩১), বাকেরগঞ্জের দুধল মৌ ইউনিয়নের সুন্দরকাঠী গ্রামের মৃত আবুল কাসেম হাওলাদারের ছেলে রমজান হাওলাদার (৩৮) ও ফরিদপুরের নগরকান্দা থানার সুতারকান্দা গ্রামের মৃত আওলাদ আলী মোল্লার ছেলে রং মিস্ত্রি সেন্টু মোল্লা (৫০)। নিহত অপর তিনজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

উজিরপুর ফায়ার সর্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক তারা ঘটনাস্থলে ঘিয়ে বাসটি কেটে তার মধ্যে আটকে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আটজন এবং পাশের ডোবা থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। এছাড়া ১৭ জনকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরন করেছেন।

 

মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহতের ঘটনায় তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান। এসময় তিনি আহতদের চিকিৎসার সার্বিক সহায়তা করারও ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যর কমিটি গঠণ করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন নিহতের ঘটনায় তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার সার্বিক সহায়তা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, এ দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে তিন সদস্যর কমিটি গঠণ করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে শেবাচিম হাসপাতালে ছুঁটে যান বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক। এসময় শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

 

দূর্ঘটনাকবলিত পরিবহনের আহত যাত্রীদের বরাত দিয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, শুরু থেকেই পরিবহনটির গতি ছিল বেপরোয়া। একাধিকবার যাত্রীরা চালককে ধীরে চালানোর অনুরোধ করেও কোন সুফল মেলেনি। তিনি আরও বলেন, বেপরোয়াগতির পাশাপাশি আরো দুটি কারণ হতে পারে, এরমধ্যে একটি হতে পারে দূর্ঘটনার আগ মুহুর্তে চালকের ঘুম। অপরটি যান্ত্রিক ত্রুটি। উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ বলেন, প্রাথমিকভাবে এটা নিশ্চিত যে দুর্ঘটনার সময় বাসের বেশ গতি ছিল। কারণ দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় একশ’ গজ দুরত্বের একটি ডোবা থেকে এক যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতি বেশি না থাকলে মরদেহ এতোদূরে যেত না। গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি শেখ বেল্লাল হোসেন বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটি ও চালকের অসাবধানতায় এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চালক ও হেলপার কেউ বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন সেটা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, বাসটি আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। সড়কে এখন যান-চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।