Leadসব সংবাদ

ফের করোনার ভয়াল থাবা বিস্তৃত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী

ফের করোনার ভয়াল থাবা বিস্তৃত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। এক বছরের উত্থান-পতনের পর করোনার নতুন ও ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সর্বোচ্চ সতর্কতার পথে চলছে বিভিন্ন দেশ।

ইতালিতে গেল সপ্তাহের শেষ দিনে ২৫ হাজার বাসিন্দা নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালের শয্যা ফাঁকা নেই। ‘ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’-এর উপর চাপ বাড়ছে। আর সেই সঙ্গে তাড়া করছে গত বছরের ভয়াবহ স্মৃতি। এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘মনে হচ্ছে, সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।’

সংক্রমণ ফের নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ অবশ্যই নতুন স্ট্রেন। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগে গোটা দেশটাকেই ‘রেড জ়োন’ ঘোষণা করতে চলেছে ইতালি। আবার দেশ জুড়ে জারি হবে লকডাউন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্রের ভিত্তিতে ৩ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল, ইস্টারের ছুটিতে লকডাউন থাকবে গোটা দেশে।

ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেন এবং সেই সঙ্গে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেনের ধাক্কায় ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থা সঙ্গিন। বিশেষ করে ব্রিটেন, ইটালি, জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্পেনের। এ দিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১ নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হয়েছে। ডেনমার্কের কয়েক জন রোগীর শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে প্রতিষেধকটি নেওয়ার পরে। এর পরেই ডেনমার্ক এই ভ্যাকসিনটির উপরে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

একই অভিযোগে অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, নরওয়ে-সহ আরো আটটি ইউরোপীয় দেশ চ্যাডক্স১ প্রয়োগ বন্ধ করেছে। জার্মানি জানিয়েছে, তারা এই টিকাকরণ চালিয়ে যাবে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন এবং নেদারল্যান্ডসও চ্যাডক্স১-এ আস্থা রাখছে বলে জানিয়েছে। ইউরোপের টিকা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ জানিয়েছে যে, তারা এই প্রতিষেধক প্রয়োগ বন্ধ অনুমোদন করছে না। তাদের বক্তব্য, ‘টিকাকরণ যেমন চলার, চলবে। তবে একই সঙ্গে থ্রম্বোএম্বোলিক সমস্যা নিয়ে তদন্ত চলবে।’

এদিকে করোনায় শীর্ষ আক্রান্ত দেশ আমেরিকার পরিস্থিতির আগের চেয়ে তুলনামূলক ভাল। গড়ে দৈনিক ২ লক্ষ সংক্রমণ কমে এখন ৬০ হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে বলে পাবলিক হেলথ পরিসংখ্যান জানিয়েছে। পুরো দেশে বজায় রয়েছে স্বাস্থবিধি পালনের কড়াকড়ি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই মাস্ক পরা, পারস্পরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার বিষয়ে শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।

‘জনগণকে কঠোরভাবে স্বাস্থবিধি পালনের পরামর্শ’ দিয়ে আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি বলেছেন, ‘যে কোনো মুহূর্তে আরো একটি ঢেউ আছড়ে পড়তেই পারে। বাড়তে পারে সংক্রমণের ঊর্ধমুখী গতি। ফলে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।’

বার্তা২৪.কম’কে আমেরিকার টেক্সাস থেকে প্রফেসর ডা. জেহাদ খান জানান, ‘স্বাস্থবিধি পালনের ক্ষেত্রে সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সহযোগিতা দেখা যাচ্ছে। অপ্রয়োজনে কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। মাস্ক ব্যবহারকে মানুষ স্বাভাবিক জীবন-যাপনের অঙ্গে পরিণত করেছে। এমনকি, মসজিদে একেক ওয়াক্তের নামাজের সময় তিন বা চারটি করে জামাতের আয়োজন করে লোকসমাগম ও ভিড় কমানো হচ্ছে।’

প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. জেহাদ খান ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গমন করেন। বার্তা২৪.কম’কে তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানত টিকাকরণ, জনসচেতনতা ও কঠোর স্বাস্থবিধি পালনের কারণেই আমেরিকার ক্রমবর্ধিষ্ণু চরম-করোনা-পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’

ইউরোপ ও আমেরিকার মতোই এশিয়ার নানা দেশে ফের করোনা বিস্তারের আলামত দেখা যাচ্ছে। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে করোনার নতুন ধরণের বিস্তারের কারণে পরিস্থিতি অবনতিশীল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিককালে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ফলে টিকাকরণের পাশাপাশি কঠোরভাবে স্বাস্থবিধি পালনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রবলভাবে সংক্রমণ ভারতের মহানগর মুম্বাই শহরে। বাড়ছে কন্টেনমেন্ট জোন। কোথাও কার্যকর করা হচ্ছে রাত্রিকালীন কার্ফু। কোথাও সাময়িক লকডাউন। সব মিলিয়ে চিন্তায় মহারাষ্ট্র সরকার।

শনিবারই (১৩ মার্চ) মীরা ভয়ন্দর পুর এলাকায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই এলাকার ‘হটস্পট’ এলাকাগুলোতে লকডাউন চলবে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে খবর। প্রশাসন ইতিমধ্যে এই পুর এলাকায় পাঁচটি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তার মধ্যেও ভরসা এই যে মুম্বইয়ের বস্তিতে এখনও তেমন করে সংক্রমণ ধরা পড়েনি, যতটা ধরা পড়েছে বহুতলগুলিতে।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ছিলেন মুম্বইয়ের বহুতলের বাসিন্দা। মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার আগে মূলত মুম্বই ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বহুতলেই সংক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল। এখন কয়েকটি বস্তি এলাকার নির্দিষ্ট অংশে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেলেও তেমন চোখে পড়ার মতো সংক্রমণ ঘটেনি। এর আগে ধারাভি বস্তিতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে নাজেহাল হতে হয়েছিল প্রশাসনকে। এশিয়ার এই বৃহত্তম বস্তি ধারাভিতে প্রায় ১০ লক্ষ লোকের বাস। জনঘনত্বও অত্যাধিক বেশি। সেই ধারাভি এখন অনেকটাই সুরক্ষিত। তবে আগামী দিনে নতুন করে শহরের বস্তিতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়লে প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পাবে, মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।