মত-অমতসব সংবাদ

ফুরিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক ফ্লপ মাস্টারেরা

আপনি দেশের একই বয়েসি ছেলে-মেয়েদের ধর্ম-দেশপ্রেম-সংস্কৃতি মাপামাপি করেন; স্বপ্রণোদিত পঞ্চায়েতির গ্রাম্য অভ্যাসে। মসজিদ-মন্দির থেকে শহীদের বেদি; সর্বত্র আপনি ধূপ জ্বালিয়ে ধর্ম ও দেশপ্রেমের মন্ত্রপাঠ করেন। এই যে যাপিত জীবনে নৈতিকতা চর্চা না করে; কেবল আনুষ্ঠানিকতার মাঝে শ্রদ্ধা-ভক্তি চর্চা করে রাষ্ট্রীয় লুন্ঠন ও দুর্নীতির যে দৃষ্টান্ত আপনারা রেখেছেন; সেখানে কোন মুখে আর প্রত্যাশা করেন; নতুন প্রজন্ম আপনাদের কথিত মূল্যবোধের গালগল্প শুনে আপনার কথাকে আর গুরুত্ব দেবে ।

আপনার বয়স যদি চল্লিশের ওপরে হয়; এই পৃথিবীর জন্য আপনি একটু পুরোনো মানুষ। চল্লিশের নীচের জেনারেশান ওয়াই আর জেডের এই নতুন পৃথিবীতে নতুন করে খাপ-খাওয়াতে হবে আপনাকে। আপনার প্রচলিত ধর্মপ্রেম-দেশপ্রেম-সংস্কৃতি আপনি নিজে চর্চা করুন। আপনি যদি নতুন প্রজন্মের ওপর জোর করে আপনার চিন্তার পুলিশি খাটাতে যান; হিতে-বিপরীত হবে। এখনো আপনার মন রাখতে অপেক্ষাকৃত প্রাচীন মূল্যবোধের যতটুকু চর্চা তারা করে; সেটাও প্রত্যাখ্যান করবে তারা।

আপনি আপনার চল্লিশ থেকে আশি বছরের জীবনে পৃথিবীতে এমন কোন উজ্জ্বল সংস্কৃতি ও সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে রাখেননি যে জেনারেশন ওয়াই ও জেড আপনাকে ‘আইকন’ হিসেবে অনুসরণ করবে। ওরা পদে পদে যে ধর্মীয়-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভণ্ডামি দেখে বড় হয়েছে; যেভাবে ওদের প্রতিবাদি মিছিলগুলোতে আপনাদের চর্চিত রাষ্ট্রের পুলিশ হানা দিয়েছে; ওরা চিনে গেছে নিষ্ঠুর আপনাকে।

ওরা আপনার জীবনে ধর্ম-দেশপ্রেমের বাড়াবাড়ি দেখেছে; কিন্তু আর্থিক সততার ছিটেফোটাও দেখেনি। ওরা সংস্কৃতি নিয়ে আপনার হামবড়া দেখেছে; কিন্তু পরচর্চা আর মত-পুলিশিটাই আপনার আসল সংস্কৃতি তা ধরা পড়ে গেছে ওদের কাছে।

ওয়াই ও জেড প্রজন্ম পৃথিবীর সব জায়গায় বিদ্রোহ করেছে। শুধু দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামে নয়; ইউরোপ-এমেরিকার শহরগুলোতে তারা প্রতিবাদমুখর। তাদের কাছে পরিবেশ বাঁচানো, সমাজে সাম্য আর সুবিচার নিয়ে আসা প্রধান চ্যালেঞ্জ। আপনার মতো চিন্তার কুঁচকুঁচানি বিলাসিতার সময় তাদের নেই।

জাঢ্য-জরদগব আপনার মতো ধর্ম-রাজনীতি-রাষ্ট্রের ছোট ছোট ঘেট্টো-কোকুনের মাঝে আত্মকেন্দ্রিক জীবন যাপন ওরা করে না। এই আপনার নিজের ছেলে-মেয়েটি দেশেই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, পশ্চিমে বড় হওয়ায় মাতৃভাষাটা শিখতে পারেনি; তারা আপনার একটা হোয়াটস এপ বার্তার উত্তর দেবারও সময় পায় না। আপনি কিন্তু তার সঙ্গে কোন পুলিশি করে পাত্তা পান না।

আপনি দেশের একই বয়েসি ছেলে-মেয়েদের ধর্ম-দেশপ্রেম-সংস্কৃতি মাপামাপি করেন; স্বপ্রণোদিত পঞ্চায়েতির গ্রাম্য অভ্যাসে। মসজিদ-মন্দির থেকে শহীদের বেদি; সর্বত্র আপনি ধূপ জ্বালিয়ে ধর্ম ও দেশপ্রেমের মন্ত্রপাঠ করেন। এই যে যাপিত জীবনে নৈতিকতা চর্চা না করে; কেবল আনুষ্ঠানিকতার মাঝে শ্রদ্ধা-ভক্তি চর্চা করে রাষ্ট্রীয় লুন্ঠন ও দুর্নীতির যে দৃষ্টান্ত আপনারা রেখেছেন; সেখানে কোন মুখে আর প্রত্যাশা করেন; নতুন প্রজন্ম আপনাদের কথিত মূল্যবোধের গালগল্প শুনে আপনার কথাকে আর গুরুত্ব দেবে ।

জেনারেশান ওয়াই ও জেড নিজের মতো করে ধর্ম-দেশপ্রেম-সংস্কৃতি চর্চা করে। ওরাই যেহেতু আজ ও আগামির পৃথিবীর বাসিন্দা; ধরিত্রী চিন্তাটি ওদেরকে ওদের মতো করে করতে দিন।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন হচ্ছে ইন্টারনেট; গোটা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে; মানব সভ্যতাকে সংযুক্ত করে এক অখণ্ড পৃথিবীর রূপায়ন করেছে এই আন্তর্জাল। জেনারেশান ওয়াই ও জেড এই নতুন বিশ্বব্যবস্থায় বেড়ে উঠেছে; ফলে আপনার কোণা-কাঞ্চি-মহল্লার ‘পাতকুয়া অনুভূতির উত্তেজনা’ তাদের চোখে হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মতো দেখায়।

আপনার বয়স হয়েছে। পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে নায়ক বা নায়িকা হিসেবে আপনাকে আর মানাচ্ছে না। বয়েসি পৃথুল অভিনেতার মতো ‘বিএ’ ক্লাসের ছাত্র সেজে বা রূপচর্চা ক্লান্ত অভিনেত্রীর মতো ‘চঞ্চলা কিশোরী’ সেজে নতুন সোশাল মিডিয়ার রূপালী মঞ্চে এসে আপনার সংস্কৃতি পুলিশি বন্ধ করুন। জেনারেশান ওয়াই ও জেডের চোখে আপনি সাংস্কৃতিক ফ্লপ-মাস্টারের বেশি কিছু নন।