প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসককে বদলি, ফের ক্লিনিক বন্ধের নির্দেশ
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার শহীদ নিজাম উদ্দিন রোডের ডক্টর’স ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ডা. মুর্শিদা আক্তারকে বদলি করা হয়েছে। তাকে মানিকগঞ্জ থেকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে বদলি করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডা. মুর্শিদা আক্তার ও ড্যাবের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. খায়রুল হাসানের মালিকানাধীন ডক্টর’স ক্লিনিকটির ফের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখারও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জুন ডক্টর’স ক্লিনিকে ডা. মুর্শিদা আক্তারের হাতে ভুল চিকিৎসায় উপজেলার বাগজান মুলজান এলাকার রতন মিয়ার স্ত্রী মালা বেগমের (২৩) মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
এদিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনার পরের দিন সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জেলা সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম গত ১৫ জুন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মিনহাজ উদ্দিনকে আহ্বায়ক, সদর হাসপাতালে গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুল আওয়াল রতনকে সদস্য সচিব ও শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরশাদ উল্যাকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং ক্লিনিকটি সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম অভিযুক্ত সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মুর্শিদা আক্তারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কাছে বদলির সুপারিশ করেন।
এর ফলে গত ৫ জুলাই পরিচালক (স্বাস্থ্য) ঢাকা বিভাগ ডা. নিতীশ কান্তি দেবনাথ স্বাক্ষরিক এক প্রজ্ঞাপনে অভিযুক্ত ডা. মুর্শিদা খাতুনকে গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পদায়ন করেন।
সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, ‘অভিযুক্ত ডাক্তার মুর্শিদা খাতুনকে শাস্তিমূলক কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।’
এদিকে সিভিল সার্জন অফিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ জুলাই ডা. মুর্শিদা খাতুনকে মানিকগঞ্জ থেকে অবমুক্ত করা হয়। এদিকে সর্বশেষ গত ২ জুলাই সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম জেলা প্রশাসনের পরবর্তী আদেশ না আশা পর্যন্ত ডক্টর’স ক্লিনিকটি ফের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে পত্র দেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত ডা. উত্তম কুমার সরকার জানান, প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সিভিল সার্জন পত্র দিয়ে ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করলেও তা উপেক্ষা করে ক্লিনিকটি পরিচালিত হচ্ছিল।
সূত্রমতে, গত ২৭ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেট নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুনের নেতৃত্বে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল সার্জন অফিসের ডা. উত্তম কুমার সরকারসহ একদল পুলিশ ক্লিনিকটিতে অভিযান চালায়।
ক্লিনিকটির সিভিল সার্জনের নির্দেশ না মেনে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেবা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে প্রতারনার দৃশ্য দেখেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ভ্রাম্যমাণ আদালত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২০০৯ এর ৫২ ধারা ও ৫৩ ধারার অপরাধে ক্লিনিকটির পরিচালক ড্যাবের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. খায়রুল হাসানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ওই আদালত সিভিল সার্জনের আদেশ অমান্য করে ক্লিনিক পরিচালনার অপরাধে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লিনিকটি বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন।
ঢাকা জার্নাল, জুলাই ৯, ২০১৮।