শিক্ষা-সংস্কৃতিশীর্ষ সংবাদসব সংবাদ

প্রশ্নফাঁস: ভিআইপি নম্বরসহ ৩শ মোবাইল নম্বর শনাক্ত

ঢাকা জার্নাল: চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত ভিআইপি নম্বরসহ তিনশ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব মোবাইল ফোন ও টেলিফোন নম্বর ব্যবহারকারীর মধ্যে পরীক্ষার্থী ছাড়াও রয়েছেন অভিভাবক এবং মেডিক্যাল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এই নম্বরগুলো ধরে পুলিশ গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে। এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া নম্বরগুলো বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটি’র প্রথম সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কমিটির প্রধান এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পর্যালোচনা করে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার বিষয়ে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মো. তিনি।
সভা শেষে মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে অভিযোগ এসেছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। এ পর্যন্ত তিনশ মোবাইল ও টেলিফোন নম্বর চিহ্নিত করে তা ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক ও টেলিফোনে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এই নম্বরধারীদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী যারা মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিষয়ে পড়ালেখা করছেন। অনেক অভিভাবকের নম্বরও রয়েছে এই তালিকায়।’
বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ওই নম্বরগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নম্বরও পাওয়া গেছে। তারা আবার খোঁজ নিচ্ছেন, কেন তাদের নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরও জানান, যাদের নম্বর বন্ধ হয়েছে, তারা অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেও চাচ্ছেন।
মো. আলমগীর জানান, এরই মধ্যে শনাক্ত হওয়া নম্বরের ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। ১৪ জনকে আটকও করা হয়েছে। এদের সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষা সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘টেলিফোন নম্বর যাদের পাওয়া যাবে, তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবলিক পরীক্ষা আইন ও সাইবার অপরাধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনও হতে পারে, তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছে, সেখান থেকে তারা বহিষ্কারও হতে পারে।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কিনা, মিডিয়ায় যেসব তথ্য-প্রমাণ এসেছে কমিটি সেগুলো দেখে পর্যালোচনা করবে। সভায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। আসলেই ফাঁস হয়েছে কিনা, কতক্ষণ আগে ফাঁস হয়েছে, তার প্রভাবটা কী, কতজন ছাত্র-ছাত্রী এটির মধ্য দিয়ে প্রভাবিত হয়েছে, পরীক্ষা বাতিল করা হবে কিনা, বাতিল করা হলে কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হবে— এগুলো পর্যালোচনা করে সুপারিশ করব।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার মাত্র ৫-১০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র পাচ্ছে। ওই প্রশ্ন পেয়ে তো বেশি প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। আবার দেখা গেছে, বেশ আগে ফাঁস হলেও পাঁচ বা ১০ হাজার ছেলেমেয়ে এসব প্রশ্ন পেয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছে ২০ লাখের বেশি। এমন বিষয়গুলো হিসাব-নিকাশ করব। তারপর সুপারিশ করা হবে। কর্তৃপক্ষ (মন্ত্রণালয়) সিদ্ধান্ত নেবে।’ আগামী রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় ১১ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিটিআরসি প্রতিনিধি, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি কমিটিতে রয়েছে।
কমিটিকে দুই দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কমিটির কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে বলা হলেও কমিটি প্রধান জানান, কমিটি গঠন সংক্রান্ত কাজ পেয়েই প্রথম বৈঠক করছি।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.