মত-অমতসব সংবাদ

প্রতিবাদের তীব্রতা মেপে দায়িত্বপালন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর

এই আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর একটি অন্ধকার ইমেজ আছে। চট জলদি অপরাধী গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে তাকে হত্যার মাধ্যমে অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে বিচার বহির্ভূত শাস্তি দেবার নিয়মিত নজির স্থাপন করে রেখেছে বিশেষত আইন শৃংখলা রক্ষা কারী এলিট ফোর্স। এই অপরাধী গ্রেফতারের বিষয়টিও দৈবচয়িত। কোন অপরাধ ঘটনার সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ হলে; সে প্রতিবাদের তীব্রতা মেপে দায়িত্বপালন করে তারা।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হবার পর অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সন্দেহভাজন ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন আদালতে বিচারিক কার্যক্রমের মাঝ দিয়ে সন্দেহভাজন ধর্ষকের অপরাধ প্রমাণিত হলে সে শাস্তি পাবে।

দ্রুততার সঙ্গে সন্দেহভাজন অপরাধী গ্রেফতার আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাষ্ট্র তাদের বেতন-ভাতা দেয়।

যে দায়িত্বপালনের জন্য কেউ চাকরিতে নিযুক্ত; সে দায়িত্ব পালনের জন্য অনেক বড় করে ‘ধন্যবাদ’ পাবার তৃষ্ণা এ প্রজন্মের সরকারি চাকুরেদের মাঝে দৃশ্যমান। তাই কোন অপরাধী গ্রেফতারের পর অনেক বড় করে সংবাদ সম্মেলন করা, টিভি চ্যানেলগুলোতে বিষয়টিকে ‘বিরাট কাজ করেছি’ এমন করে তুলে ধরার একটা প্রবণতা নিয়মিত।

যদিও অপরাধীর অপরাধ প্রমাণিত না হবার আগে পর্যন্ত তাকে মিডিয়ায় উপস্থাপন রীতিমত বে-আইনি। মিডিয়া নৈতিকতার পরিপন্থী এই কাজটি। তবু নিয়মিতভাবেই এটা করা হচ্ছে। সুতীব্র কৃতিত্ব দাবির তৃষ্ণা থেকেই সন্দেহভাজন অপরাধীকে মাঝখানে রেখে বীরবেশে ফটোসেশান করে আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর লোকেরা।

বে-আইনিভাবে সন্দেহভাজনকে মিডিয়ায় এনে ফেললে; তা জন আলোচনার সূত্রপাত করে স্বাভাবিকভাবে। কারণ কোন বিষয় মিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিকের সামনে আনলে তাতে জন আলোচনার অধিকার তৈরি হয়।

এই আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর একটি অন্ধকার ইমেজ আছে। চট জলদি অপরাধী গ্রেফতার ও ক্রসফায়ারে তাকে হত্যার মাধ্যমে অনেক নিরাপরাধ ব্যক্তিকে বিচার বহির্ভূত শাস্তি দেবার নিয়মিত নজির স্থাপন করে রেখেছে বিশেষত আইন শৃংখলা রক্ষা কারী এলিট ফোর্স। এই অপরাধী গ্রেফতারের বিষয়টিও দৈবচয়িত। কোন অপরাধ ঘটনার সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ হলে; সে প্রতিবাদের তীব্রতা মেপে দায়িত্বপালন করে তারা।

কোন হত্যাকাণ্ডের আসামি খুবই প্রভাবশালী হলে; সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মতো আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবার তারিখ কমপক্ষে ৭০ বার পেছাতে পারে। কোন ধর্ষণের আসামি প্রভাবশালী হলে; তনু ধর্ষণ ও হত্যা ঘটনার মতো প্রথমে মেডিকেল রিপোর্টে গড়বড় করে এরপর ‘নো ওয়ান কিল্ড’ তনু জাতীয় তমসায় ঢেকে ফেলা হয় অপরাধের সুবিচারকে। আবার কোন হত্যাকাণ্ডে সরকার দলীয় কর্মীদের সম্পৃক্ততা থাকলে; বিশ্বজিত হত্যাকাণ্ডের মতো মেডিকেল রিপোর্ট-পুলিশি প্রতিবেদন সব কিছুতে গড় বড় করে খুনিকে বাঁচিয়ে রাখার খলতা ক্রিয়াশীল হতে দেখা যায়।

এরকম সাম্প্রতিক অতীত রেকর্ড যে আইন-শৃংখলা বাহিনীর; তাকে জনমানুষ উপকথার মিথ্যাবাদি রাখাল বালক হিসেবেই চেনে। এই রাখাল বালক হঠাত করে একদিন সত্যি কথা বললেও জনমানুষের পক্ষে তার কথা বিশ্বাস করা কঠিন।

সাম্প্রতিক ধর্ষণের অপরাধের সন্দেহভাজন অপরাধীকে দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার করার পর; স্বাভাবিকভাবেই এটাই প্রকৃত আসামি নাকি বানোয়াট আসামি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আদালতে বিচারিক কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন হলে তবেই এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার সমর্থকরা ভীষণ বিক্ষুব্ধ এরকম প্রশ্ন উত্থাপনে। এরা যেহেতু গ্রামীণ-সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা লোক; এরা ‘মাতবর সাহেবের কথার ওপরে কথা নাই’ গোত্রের লোক। ‘কইয়া দিছি এইডাই অপরাধী; সুতরাং বিশ্বাস যাও; অবিশ্বাস করছিলা, একুন তওবা করো মিয়া’; এরকম কালচারাল লেভেলের লোকেরা জনমতের টুটি চেপে ধরার উপক্রম করেছে।

এটাকে অনেকে ‘ফ্যাসিবাদি’ আচরণ বললেও; এ হচ্ছে পাতকুয়ার ফইন্নিবাদি আচরণ। এ ব্যাপারটা দেশে দেশে ঘটছে। শিক্ষা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকা একটি গোষ্ঠী সরকারের দালাল হয়ে কোথাও জনগণকে জোর করে কলেমা পড়াতে চেষ্টা করছে; কোথাও জোর করে জয় শ্রীরাম বলাতে চেষ্টা করছে তো কোথাও টুটি চেপে ধরে ‘সহমত ভাই’ বলানোর চেষ্টা করছে। এ রীতিমত ধস্তাধস্তির রূপ নিয়েছে বিশেষত পাতকুয়া সমাজগুলোতে।

২৮ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
২৮ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি একটি ভার্চুয়াল সাম্যচিন্তার ধারণা প্রচলন করেছে। এখন সরকারের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে দীন-হীন অবস্থা থেকে একটা চর্বি-নধর রূপান্তরের মাঝ দিয়ে ফইন্নিবাদিরা যখন মাতবর হয়ে উঠেছে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তখন মাতবরি প্রথা বিলুপ্ত করেছে। এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে নব্য গ্রাম্য মাতবরদের।

এটা চিরন্তন সত্য যে, যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকবে; তার যে কোন কাজের জনসমালোচনা বেশি হবে। কিন্তু স্বৈরফইন্নিবাদিদের ‘সমালোচনা’ অসহ্য লাগে; তাদের কেবলই প্রশংসার তৃষ্ণা। এদের জীবনের ট্র্যাজেডি হচ্ছে; শৈশব থেকে প্রশংসনীয় কোন কাজ করেনি; এখন জোর করে প্রশংসা আদায়ের একটা গজরানি তাই নিয়মিত দৃশ্যমান।

ক্ষমতাসীন সরকারের একটি সরাসরি প্রতিপক্ষ রয়েছে। প্রতিপক্ষতার কারণে তারা সরকারের সমালোচনা করে। এটা তাদের প্রাধিকার। তারাও অতীতে স্বৈরফইন্নিবাদি ছিলো; তখন তাদের ‘সরকারের সমালোচনা’ সহ্য করতে পারতো না।

ফইন্নিবাদি বনাম ফইন্নিবাদি এই কলতলার বচসাটি অনগ্রসর জনপদের ললাট লিখন।

কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনায় ক্ষমতাসীন স্বৈরফইন্নিবাদিরা ‘সুশীল’ শব্দটির প্রতি আজন্ম ক্ষোভ বশতঃ, তাদের ফইন্নি প্রতিপক্ষের পাশাপাশি ‘সুশীল’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে শৈশবের বঞ্চনার ক্ষোভ মিটিয়ে চলেছে।

প্রতিপক্ষের ফইন্নিবাদিদের সঙ্গে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক মিলের কারণে সাইবার বুলিতে এক অভিন্ন ফইন্নি সত্ত্বার দাপাদাপি সোশাল মিডিয়ায় চোখে পড়ে।

কিন্তু সুশীলের প্রতি এদের আজন্ম ক্রোধ; এটাকে তারা ভ্রান্ত এক শ্রেণী সংগ্রাম হিসেবেই নিয়েছে বলে মনে হয়।

এর আসলে কোন প্রয়োজন নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে বা সরকারি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যারা একটু সচ্ছল জীবন-যাপনের সুযোগ পেয়েছে; তাদের পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষা-সংস্কৃতি-সামাজিক গতিশীলতায় ক্রমেই ‘সুশীল’ বা ‘ সিভিল’ বা ‘শিষ্টাচারসম্পন্ন’ হয়ে উঠবে। তারা গণতন্ত্র ও জবাবদিহির সংস্কৃতির দাবিতে পদে পদে রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সমালোচনা করবে। সমালোচনা ও সংশোধন পদ্ধতিতেই সমাজ ও রাষ্ট্র সভ্য হয়ে ওঠে।