Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

পিলখানা হত্যা মামলার বিচার প্রায় শেষ

law_ঢাকা জার্নাল: ৪১০ আসামি খালাস চেয়ে এবং ৬৯ জনের সাজা চেয়ে হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের করা পিলখানা (বিডিআর) হত্যা মামলার আপিল শুনানি প্রায় শেষের পথে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এখন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অব্যাহত রয়েছে।

আসামিপক্ষের শুনানি শেষে কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা উপস্থাপন করবেন দুইপক্ষ। পরে রায় ঘোষণার দিন আসতে পারে।

বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে বিচারপতি মো.আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদর দফতরে সংঘটিত ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জন বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন বিচারিক আদালত।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত ২৭৭ জনের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন তাদের আইনজীবীরা।

গত বছরের ৪ জানুয়ারি সকল ডেথ রেফারেন্স ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চটি গঠন করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন।

প্রথমবারের মতো ৫ জানুয়ারি এ বেঞ্চ বসে ১৮ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন। এরপর ১৮ জানুয়ারি থেকে এ মামলার শুনানি শুরু হয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এজন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত ২ কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।

গত বছরের ৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরুর দিনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ১৫২ জনের দণ্ডটা বিভিন্ন কারণে দেওয়া হয়েছে। কেউ সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, কেউ অস্ত্র নিয়ে দরবার হলের আশে-পাশে ছিলেন, কেউ পিলখানার আশে-পাশে ঘোরা ফেরা করেছেন। আবার কেউ মরদেহ গুম করার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি বলেন, এই বিচার হচ্ছে হচ্ছে সাধারণ আইনে। তাই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম হলো নিম্ন আদালত সর্বোচ্চ শাস্তির কোনো আদেশ দিলে হাইকোর্ট যতোক্ষণ সে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না করেন, সে পর্যন্ত এটি কার্যকর হয় না। তবে এখন চূড়ান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট হয়তো এটি কমাতেও পারেন।

রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষের দিকে। এরপর দুইপক্ষের কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা উপস্থাপন করবেন। পরে রায় ঘোষণার দিন আসতে পারে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম সরদার বলেন, আশা করি অচিরেই হাইকোর্টে এ মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আসামিপক্ষে শতাধিক ডেথ রেফারেন্সর ওপর শুনানি শেষ করেছি।

তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে অনেক আসামি খালাস পেলেও কিংবা কারো কারো সাজার মেয়াদ শেষ হলেও বিস্ফোরক মামলা থাকায় তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। হত্যা মামলাটির বিচার যেভাবে দ্রুত শেষ হয়েছে, যদি এ মামলাটির বিচার শেষ হতো তাহলে খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা মুক্তি পেতে পারতেন। আমি আশা করবো, বিস্ফোরক মামলাটির বিচারও দ্রুত শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ উদ্যোগ নেবেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বর্তমানে বিজিবি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করেন বিপথগামী বিডিআর সদস্যরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল কলঙ্কজনক ঘটনা বলে বিবেচিত।

ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা হয়। বিচারিক কাজ শেষে হত্যা মামলার রায় দেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত। বিষ্ফোরক মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম একই আদালতে চলমান রয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.