পাকিস্তানের সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক আপতত ছিন্ন আপতত নয়
ঢাকা জার্নাল : কূটনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জোরাল হয়ে উঠলেও আপাতত সেদিকে এগোচ্ছে না বাংলাদেশ। ইসলামাবাদে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তার কয়েক ঘণ্টার জন্য নিখোঁজ থাকার প্রেক্ষাপটে নিয়ে মঙ্গলবার সংসদে এই প্রশ্নের মুখে পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী তা পরিষ্কার করেন।
তিনি বলেন, টানাপড়েন হলেই যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এমন নয়। যুদ্ধের সময়ও অনেক দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকে। আপাতত কিছু করতে চাচ্ছি না। ভবিষ্যৎ বলে দেবে এটা কোন দিকে যাবে। সময়টা বিবেচনা করতে হবে। সব কথার শেষ কথা হল, জাতীয় স্বার্থটা মাথায় রাখতে হবে। সেই বিষয়টা বিবেচনা করে আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করে থাকি এবং পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করি। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই বিষয় প্রযোজ্য হবে।
মঙ্গলবার ইসলামাবাদের বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস উইংয়ের পার্সোনাল স্টাফ (পিও) জাহাঙ্গীর হোসেন নিখোঁজের ঘটনায় মঙ্গলবার ঢাকায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল।
এরপর বিকালে সংসদ অধিবেশনে ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তার নিখোঁজের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কি না?
জাহাঙ্গীরকে নিখোঁজ হওয়ার আগে ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কর্মকর্তাকে সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। তার কাছে থাকা ‘অবৈধ’ ভারতীয় রুপি জব্দ করে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এর মধ্যেই বিকালে ইসলামাবাদে মেয়েকে স্কুল থেকে আনার পথে জাহাঙ্গীরকে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে খবর আসে। রাতে তাকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাওয়া গেলেও কারা নিয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঢাকার পক্ষ থেকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলার পর পাকিস্তান তার দূতাবাসের দুই কর্মকর্তাকে ফের নেওয়া থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েনে নতুন মাত্রা যোগ হয়।
এর আগে একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর পর দুই দেশের সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়।
সংসদ অধিবেশনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি তুলেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই পাকিস্তান এর বিরুদ্ধাচারণ করে আসছে। বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাকিস্তান বিচারকে ‘ত্রুটিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণেদিত’ বলে মন্তব্য করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রদান ও কার্যকর করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে বরাবরই যথাযথ এবং জোরাল কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ইসলামাবাদের এই আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল মন্তব্য করে মাহমুদ আলী বলেন, পাকিস্তান বার বার আমাদের হতাশ করেছে। তবে তা কোনোভাবে ‘বরদাশত’ করা হবে না। পাকিস্তানকে এ কথা কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবে আমরা আশা করি।
যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের দাবি তুলেছে গণজাগরণ মঞ্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে শিক্ষা-সম্পর্ক স্থগিত করেছে।
ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১১৬।