রাজনীতি

পদত্যাগ দিয়েই আন্দোলনের শুরু: রুমিন ফারহানা

জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে গেছেন বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্য। রবিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দফতরে প্রবেশের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কতা বলেন দলের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। তাদের এই পদত্যাগের মাধ্যমে আন্দোলনের শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ডিসেম্বর সব রাজনৈতিক দল নিয়ে আমরা যে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দিয়েছি, তার লক্ষ্য এই সরকারের পদত্যাগ। পদত্যাগের এক দফা আন্দোলন আমাদের।’

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিএনপির বিভাগীয় জনসভা থেকে ১০টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা প্রথমটিতে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা দেওয়ার কথা। ওই জনসভায় সংসদ ভেঙে দেওয়ার যে দাবি আমাদের দলের। সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের দলের সাত জন সংসদ সদস্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করছি। আজ আমরা স্পিকার মহোদয়ের কাছে আমাদের পদত্যাগপত্র তুলে দেবো।’ শনিবারই তারা ই-মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ফোনে কথা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ফোন করে জানিয়েছি, আমরা বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে অবগত আছেন। কারণ মিডিয়ার খবরে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, এই সংসদে আমরা যতটুকু সুযোগ পেয়েছি, আমরা জনগণের কথা, দেশের কথা মানুষের কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে, আমাদের সময় দেওয়া হয়নি। আমাদের সময় খুব সীমিত ছিল। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করেছি। এখন বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করছি।’

তিনি এসময় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা অন্য দলগুলো প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি মনে করি, সংসদে আরও যে দলগুলো আছে; যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষের ভোটাধিকার বিশ্বাস করে, যারা বিশ্বাস করে লুটপাটের উপর এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই, এই সরকার জনগণের ম্যান্ডেট থেকে ক্ষমতায় আসেনি, সেই সব দলগুলোকেও সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত।’

তাদের এই পদত্যাগে সংসদে কোনও সংকট তৈরি হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সংকট তৈরি হবে কি হবে না, সেটা তো আপনারা দেখবেন। সত্যিকারের বিরল বলতে যদি কিছু বোঝা যায় সেটা হচ্ছে বিএনপি। সেটা দেশের মানুষ যেমন জানে সরকারও খুব ভালো করে জানে। সংকট যে তৈরি হবে সেটা বোঝা যায়- যখন সরকার প্রথমেই বলে, সংকট তৈরি হবে না।’

বিএনপির সংসদে আসার সিদ্ধান্ত কি ভুল ছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একদমই ভুল ছিল না। আমরা বলেছিলাম যে সীমিত সুযোগ আমরা পাবো, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমরা করবো, তিন সাড়ে তিন বছরে আপনারা দেখেছেন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়েছি। সুযোগ পাইনি, সময় পাইনি, মাইক অফ করে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্য থেকেও যতটুকু সম্ভব আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে গেছি।’

আরেক সংসদ সদস্য জি এম সিরাজ বলেন, ‘বিশাল জনসমাবেশে জনগণকে সাক্ষী রেখে আমরা পদত্যাগ করেছি। গতকাল ই-মেইলের মাধ্যমে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছি। আজকে সশরীরে আসছি স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে।’

‘যদিও বিএনপি’র পদত্যাগে যায় আসে না’ উল্লেখ করে, ‘গত চার বছর সংসদে বিরোধী দল বলতে আমরা সাত জনই ছিলাম। আর যে বিরোধী দল নামকাওয়াস্তে আছে, তারা তো পোষা বিরোধী দল। এই চারটি বছর সরকারের গীত বন্দনা করতে করতেই কেটেছে। তারা আওয়ামী লীগের বি টিম। আজকে থেকে সংসদে বিরোধী দল বলতে কোনও মশা-মাছিও থাকবে না। আমরা আগেও বলেছি এই সংসদ অবৈধ। আজকে থেকে হান্ড্রেড এ হান্ড্রেড পারসেন্ট অবৈধ।

এই সংসদের ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে সাত জনের কথা জনগণ শুনতো দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাকি ৩৪৩ জনের কথা দেয়ালগুলো শুনতো। আওয়ামী লীগ ও তাদের বি-টিম জাতীয় পার্টি সংসদে কথা বললে মানুষ টেলিভিশনের চ্যানেল অন্যটায় ঘুরিয়ে দিতো।’