নির্যাতিত ৫ বছরের শিশুটি ভালো নেই
ঢাকা:দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণসহ পাশবিক নির্যাতনের শিকার পাঁচ বছরের শিশুটির অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা জানান, শিশুটির কাটা স্থানে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিলকিস বেগম জানান, শিশুটির অবস্থা ভালো না। খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিকভাবে চললেও এখনো ভয়ে কান্নাকাটি করছে।
তিনি জানান, শিশুটির যৌনাঙ্গ ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে। কাটা জায়গায় ইনফেকশন
দেখা দিয়েছে।
ডা. বিলকিস জানান, হাসপাতালের ৯টি বিভাগের প্রধানদের
নিয়ে শিশুটির উন্নত চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ৯টায় বোর্ডের চিকিৎসকরা
শিশুটিকে দেখে গেছেন। তাকে উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছেন বোর্ডের ডাক্তাররা।
আর বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে হাসপাতালের শিশু সার্জারির ডাক্তাররা শিশুটির যৌনাঙ্গের ইনফেকশনসহ ইনজুরিগুলো দেখে গেছেন বলেও জানান ডা. বিলকিস। এর আগে বেলা ১২টার দিকে শিশুটির শরীরে সফল অস্ত্রোপচার করেন তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দুপুরে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘শিশুটির জীবনহানির শঙ্কা না থাকলেও শরীরের নানা জায়গায় গভীর ক্ষত রয়েছে। তাকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়েটিক খাওয়ানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, শিশুটির শরীরে হাত দিলেই ভয়ে কেঁদে উঠছে। ৯ সদস্যের যে মেডিকেল বোর্ড চিকিৎসা দিচ্ছেন, সে বোর্ডে মানসিক চিকিৎসকও আছেন। তিনি শিশুটির ট্রমা কাটানোর চিকিৎসা দেবেন।
শিশুটির পুরোপুরি সুস্থ হতে ২ মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলেও জানান ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে এসে দেখে যান শিশুটিকে। তিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার শিশুটির চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন। আশা করছি, সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবে’।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার জমিরহাট তকেয়াপাড়া গ্রামে গত ১৮ অক্টোবর বর্বরোচিত ওই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সকালে বাড়ির বাইরে খেলতে যাওয়ার পর শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ১১টার দিকে পার্বতীপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিশুটির বাবা।
পরদিন ১৯ অক্টোবর ভোর ৬টায় শিশুটিকে বাড়ির পাশের হলুদ ক্ষেত থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ওসিসি সেন্টারে রাখা হয়েছে তাকে।
এ ঘটনায় নির্যাতিতা শিশুর বাবা গত ২০ অক্টোবর প্রতিবেশী মাদকসেবি সাইফুল ইসলাম (৪১) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৭) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। ধর্ষক সাইফুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।
শিশুটির সঙ্গে থাকা স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, সাইফুলই বেলা ১২টায় শিশুটিকে হলুদ ক্ষেতটিতে নিয়ে যান। পরে আফজাল হোসেন কবিরাজকে নিয়ে যৌনাঙ্গ ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ধর্ষণ করেন। শিশুটির বুকে কামড় এবং গলাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করেন। নির্যাতনের পাশাপাশি শিশুটির শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকাও দেওয়া হয়।
ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২৭, ২০১৬