শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের ৫ জনকে গলা কেটে হত্যা

02নারায়ণগঞ্জ মহানগরের দেওভোগ এলাকায় দুই শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার রাতে দেওভোগের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকার একটি বাড়ির নিচতলার ভাড়া বাসা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের পর নৃশংস এই ঘটনা ঘটল।

কী কারণে কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে পুলিশ তাত্ক্ষণিক সুনির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারেনি। তবে নিহতদের এক স্বজনসহ সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহতরা হলো গৃহবধূ তাসলিমা (৩৫), তাঁর ছেলে শান্ত (১০) ও মেয়ে সুমাইয়া (৭), তাসলিমার ছোট ভাই মোরশেদুল (২৫) এবং তাসলিমার জা লামিয়া (২৫)। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেলাবাড়ি এলাকায়। আর তাসলিমার স্বামী শফিক মিয়া ঢাকায় থাকেন। তিনি পেশায় গাড়িচালক।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের এডিআইজি মোহাম্মদ আলী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা, পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিনসহ র‌্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, নিহতদের বাসা থেকে কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। এ কারণে এ হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকারীরাও নিহতদের পূর্বপরিচিত বলে সন্দেহ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে নিহত মোরশেদের খালাতো ভাই দেলোয়ারসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, পারিবারিক কারণে এ হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অন্য বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ড পেশাদার খুনিদের কাজ নয় বলে তিনি জানান।

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে গতকাল রাতে তাসলিমার মা মোর্শেদা বেগম ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ছুটে আসেন। তিনি জানান, তিনি ঢাকার ধানমণ্ডি ৭ নম্বরে খালার বাড়িতে থাকেন। ছেলে মোরশেদুলের সঙ্গে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। মোরশেদুল হোসিয়ারি ব্যবসা করেন। ব্যবসার জন্য মাকে একটি ঋণ নিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। মোর্শেদা বেগম রাজিও হয়েছিলেন। গতকাল সকালে তিনি মোরশেদুলের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পান। তখন বাসার অন্যদের মোবাইল নম্বরে ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সবার ফোনই বন্ধ পান। এরপর নারায়ণগঞ্জে থাকা তাসলিমার ননদ হাজেরা বেগমকে ফোন করে ওই বাসায় পাঠানো হয়। তিনি বাসায় গিয়ে বাইরে থেকে তালা দেখতে পান। বাসার সবাই বাইরে কোথাও গেছে ভেবে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিতে থাকেন। বিকেল পর্যন্ত তারা বাসায় না ফেরায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে বাসার তালা ভেঙে ভেতরে পাঁচজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে।

স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ পরিবারের পাঁচজনকে হত্যার খবর পেয়ে গতকাল রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে বাসায় পৌঁছেন তাসলিমার স্বামী শফিক। তিনি

 

সাংবাদিকদের জানান, ঢাকায় মোতালিব প্লাজার একটি কম্পানির গাড়ি চালান তিনি। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি নারায়ণগঞ্জের বাসায় ফেরেন। তবে গত বৃহস্পতিবার তিনি বাসায় আসতে পারেননি। কারা কী কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো শত্রু নেই।’ তবে এলাকায় চোরের উপদ্রব থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর বাসার দুটি জানালার কাচ ভাঙা ছিল। এ ব্যাপারে তিনি বাড়ির তত্ত্বাবধায়ককে জানিয়েছিলেন।

তাসলিমার মা মোর্শেদা বেগম জানান, তাঁর মেয়ে সুদে টাকা খাটাতেন। এ নিয়ে ঢাকার বাদল নামের এক লোক তাঁদের হুমকি দিয়েছিল।

এলাকাবাসী জানায়, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইসমাইল হোসেনের ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকত শফিকের পরিবার। গত কোরবানির মাস খানেক পর তারা এই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে ওঠে।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.