নাঈম ভাইয়ের বৈশাখী বোনাস
উম্মুল ওয়ারা সুইটি : গণমাধ্যমে কাজ করার পর থেকে যে কয়েকটি ঘটণা আমাকে আনন্দিত ও আবেগাপ্লুত করেছে,তারমধ্যে একটি হলো ‘বৈশাখী বোনাস’ পাওয়া।
টাকার অংকে খুব বেশি না। কিন্তু একজন সম্পাদকই প্রথম বুঝতে পেরেছেন, বোনাসের ঘরে বৈশাখের নামটা জাতি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে কতটা মযাদার জায়গায় নিয়ে যায়। কতটা মর্মস্পর্শ করে।
মার্চ মাসের বেতনের সঙ্গে বৈশাখী বোনাস পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা। রোববার এই ঘোষণার পরই সচিবালয়ে এক উৎসবের আমেজ তৈরি হয়।
সত্যিই বৈশাখী বোনাস হওয়া আনন্দের। কারণ বাঙলা ভাষাভাষীদের সার্বজনীন উৎসব হলো এই বৈশাখী উৎসব।
দুপুর ১টায় এক যুগ্ম সচিবের কক্ষে বসে আছি। সবাই এই বোনাস নিয়ে আলোচনা করছে। ওই যুগ্ম সচিব আমাকে প্রশ্ন করলেন, বললেন আজতো সচিবলায়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সবাই খুব খুশী। আপনারাও তো পাবেন মনে হচ্ছে?
আমি বললাম, আমি আপনার আগ থেকেই বৈশাখী বোনাস পাই। গতবছরও পেয়েছি।
শুনে তো কর্মকর্তার চোখ ছানা বড়া। মনে করেছে দুষ্টুমি করেছি। হঠাৎ বললো, দেওয়া উচিত সাংবাদিকদের। আর যা অবস্থা সাংবাদিকরা তো নাকি ঠিক মতো বেতনই পায় না। চাকরির নিশ্চয়তা নেই। আবার বৈশাখী বোনাস।
আমি বললাম, সত্যিই সত্যিই আমি বৈশাখী বোনাস পাই। প্রথম বৈশাখী বোনাস পেয়ে আমার অনেক আনন্দ হয়েছে। কারণ ছোটবেলা থেকে এই একটি মাত্র উৎসবকেই আমার সবার উৎসব মনে হতো।
তাকে বলি, আপনার মতো টাকার অংকে হয়তো আমার এই বোনাসের ভার হবে না। তবে গণমাধ্যমই প্রথম এই বোনাসের প্রথা চালু করেছে।
যুগ্ম সচিব ভ্রু কুচকে বললেন, তাই নাকি। ইন্টারেষ্টিং তো । কোথায় কোন হাউজে দিচ্ছে?
সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের কাছ থেকে আমি প্রথম বৈশাখী বোনাস পেয়েছি। উনি কিছু বলতে চেষ্টা করলেন। আমি বললাম যাই। ভালোভাবে বৈশাখটা পালন করুন। শুভ কামণা থাকলো।
যাই হোক, বেরিয়ে এলাম। মনে পড়লো বোনাস পাওয়া কথা। ২০১৪ সালের শেষের দিকে নাঈম ভাইয়ের নতুন পত্রিকা আমাদের নতুন সময়ে আমি যোগ দিয়েছিলাম। এক্সিসটিং ওয়ার্ক আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সময়ডটকমে।
জয়েন করার পর থেকেই পড়েছি সকালের মিটিংএর জালে। এরমধ্যে বাংলামোটর থেকে অফিস পান্থপথ নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেখতে দেখতে ৬মাস পার হয়ে গেলো। হঠাত একদিন সম্পাদক সাহেব আমাদের শ্লথ কাজের গতি নিয়ে মন খারাপ করলেন। বললেন, তোমাদের মার্চের বেতন দেবো না। আটকে রাখা হবে। তারপর কাজ ঠিকমতো করলে সেই বেতন পাবে।
সবারই মনে কষ্ট। মার্চ শেষ হয়ে এপ্রিলে গিয়েছে দিন। ৫ তারিখ পার হয়েছে। আমরাও কোনো কথা বলি না। ৬ অথবা ৭ এপ্রিল হবে। বিকেল চারটায় অফিসে গেলাম। নিজের ক্যাবিনেটে বসলাম। সহকর্মীরা সবাই একটু খুশী। বললো গিয়েছিলেন, একাউন্টে।
বললাম , না।
সহকর্মীরা বললো, তাড়াতাড়ি যান। বোনাস দিচ্ছে।
আমি একটু অবাক হলাম। ভাবলাম বেতনই দিচ্ছে হয়তো। সবাই জানে আমাদের সম্পাদক বেশ ইনোভেটিভ। গণমাধ্যমে তিনি নতুন অনেক কিছুই চালু করেছেন। বেতন বাড়ানো কমানো নিয়েও তার নব নব স্বাক্ষরের কথা সবাই জানে।
হাত খালি। তাড়াতাড়ি ছুটে গেলাম একাউন্টি সেকশনে। টাকা পেলাম। কিন্তু খুবই কম। ভাবলাম বোধহয় কোনো বিশেষ দিনের টাকা হবে। ক্যাশিয়ারকে জিজ্ঞেস করলাম। কিসের টাকা?
কেন আপা, ‘বৈশাখী বোনাস’।
আমার মনটা অন্যরকম ভালো হয়ে গেলো। সেই ছেলেবেলার কথা মনে পড়লো। সেই মেলা, ট্যাপা পুতুল, পেপুঁবাঁশি, মাটির সব খেল না। সব ধর্মের বর্ণের মানুষের উৎসবের দিন। খেলাঘর করার সুবাদে আমার কাছে পহেলা বৈশাখ এক অন্যমাত্রায় অবস্থান করে। কারণ আমরা এদিনটি খুব ভালোভাবে পালন করতাম। সাম্য প্রগতি আর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলতাম।
ভাবতাম, কেন বৈশাখী বোনাস হবে না। যাক, এখন আমার গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে গর্ব হয়্-এখান থেকেই বৈশাখী বোনাসের শুরুটা হয়েছে।
ওইদিনের পর থেকেই সম্পাদক বিভিন্ন টক শোতে বিষয়টি উত্থাপন করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমাদের সম্পাদকসহ গণমাধ্যম ও সংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত হন এবং সেখানেও আমাদের সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে বৈশাখী ভাতা চালুর বিষয়ে কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাস।
আমার অভিমত, আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আপাদমস্তক একজন বাঙালি। এবছর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে এও সত্য আমি জানি না, কয়টি গণমাধ্যম বৈশাখী বোনাস দেবে।
লেখক – সাংবাদিক।
ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৯, ২০১৬।