নভেম্বর থেকে টানা তিন মাস বিএনপির আন্দোলন!
আসাদ জামান : বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া ঈদের পর আন্দোলনের কথা বললেও আন্দোলনে যারা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সেই তৃণমূল নেতারা বলছেন- এখনই নয়। জোট নেত্রীকে আরেকটু ধৈর্য ধরতে হবে। অক্টোবর পর্যন্ত দল গুছিয়ে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি টানা তিন মাস বিরতিহীন আন্দোলন করতে পারলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যেতে পারে।
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা সফরকালে তৃনমূল নেতা-কর্মীরা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত টানা আড়াই বছর আন্দোলন সংগ্রাম যতটুকু হয়েছে তাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন তারা। সেই তুলনায় ঢাকা ছিল নিষ্প্রভ। এখন আবার আন্দোলন-সংগ্রামে নামতে হলে তৃণমূলের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী মনে করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে চড়ামূল্য দিতে হয়েছে তাদের। আন্দোলন করতে গিয়ে সাংগঠনিক কাজ করতে পারেন নি তারা। মামলা খেয়ে ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেকেই। গ্রেফতারের শিকার হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে নগদ অর্থ। নিজেদের ডাকা হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকেই আবার জীবন দিয়ে শোধ করেছেন দলের ঋণ। তার পরও ঠেকানো যায়নি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। সে কেবল কেন্দ্রীয় নেতাদের আয়েশি রাজনীতির কারণে।
এমন পরিস্থিতিতে তৃনমূল নেতারা বলছেন, গত ৬ মাস আন্দোলন সংগ্রাম না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি সংগঠন গোছানোর দিকেও মনোযোগ দিতে পারছে তারা। এখন হুট করে আন্দোলন শুরু করলে আবার সবকিছু অগোছালো হয়ে যেতে পারে। প্রত্যাশিত ফল তো দূরের কথা, হিতে বিপরিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলমগীর সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন যথেষ্ঠ হয়েছে। নীলফামারীতে কমপক্ষে তিনজন জীবন দিয়েছেন। তারপরও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় নি। সুতরাং, এবার আন্দোলনে নামতে হলে একটু হিসাব করে নামতে হবে। দল না গুছিয়ে আন্দোলনে নেমে কোনো লাভ হবে না।
তৃণমূলের অনেক নেতাই মনে করেন, বিএনপির হাইকমান্ড সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বরাবরই ভুল করেন। সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমে খালেদা জিয়ার জয়পুরহাট সফর নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কেউ কেউ। তারা বলেন, আষাঢ়ের মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে উত্তরবঙ্গ সফর করে বিএনপির জনসমর্থন সম্পর্কে একটা নেতিবাচক বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন খালেদা। এখন আবার বর্ষা মৌসুমে আন্দোলন কর্মসূচির কথা বলে একই ভুল করতে যাচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. তৈমুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু আবেগ দিয়ে রাজনীতি হয় না। বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিতে হয়। বর্ষা মৌসুমে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন হবে। এ জন্য আমাদের আরো দুই থেকে আড়াই মাস অপেক্ষা করতে হবে। শুষ্ক মৌসুম অর্থাৎ, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত টানা তিন মাস আন্দোলন করতে পারলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যেতে পারে।
দলের অভ্যন্তরীণ ঝামেলা না মিটিয়ে তড়িঘড়ি করে আন্দোলনে যেতে রাজি নন তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা। তারা মনে করেন, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সুযোগ সন্ধানীরা আন্দোলন সংগ্রামে বরাবরই থাকেন অনুপস্থিত। দলীয় সংকটে যাদের কোনো সময় মাঠে পাওয়া যায় না, তারাই মূলত আন্দোলন সংগ্রামের কথা বলছেন। কিন্তু আন্দোলনের ডাক দিলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় জেলা পৌর বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আত্মশুদ্ধি বা ঘর ঘোছানোর কাজ ঠিকমতো করতে না পারলে আন্দোলন জমাতে পারবেন না খালেদা জিয়া। তার উচিত হবে হাতে সময় নিয়ে আগে দল গোছানো, তারপর আন্দোলন নামা।
বিএনপির এই তৃণমূল নেতা মনে করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য আগামী নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়টা ২০ দলীয় জোটের জন্য আদর্শ সময়। এর আগে আন্দোলনে নামলে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
লেখক – আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
সৌজন্যে- বাংলানিউজ
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ০২, ২০১৪