Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

নতুন প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা কাটার আশা

35ঢাকা : বছরে এক লাখের বেশি লোক পাঠানোর কথা থাকলেও দুই বছরে মাত্র ৮ হাজার লোক মালয়েশিয়া পাঠাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। প্রায় ছয় বছর শীর্ষ ওই শ্রমবাজারের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত বদল হলেও, কাটছে না এই স্থবিরতা।

বন্ধ শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার পর ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে জি টু টি (সরকার থেকে সরকার) পদ্ধতি চুক্তি হয় বাংলাদেশের। এই চুক্তি পক্রিয়া ধীর গতিতে চলার সময় বেসরকারিভাবে তথা বি টু বি পদ্ধতি করার আলোচনা চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে আগের সব পদ্ধতিতে বাদ দিয়ে আনা হচ্ছে ‘জি টু জি প্লাস’ প্রক্রিয়া।

এই পদ্ধতিতে সরকারের পাশাপাশি দুই দেশের জনশক্তি রপ্তানিকারক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ দিতে পারবে বলে সরকার থেকে জানানো হলেও, একচেটিয়াভাবে কিছু অসাধু কোম্পানিকে সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এই পদ্ধতি আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারকরা।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মালয়েশিয়া বিষয়ক সেল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১০ লাখ লোকের চাহিদাপত্র পাঠিয়ে তা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ক্রমান্বয়ে আরও ৫ লাখ লোক নেয়ার আশ্বাস দেয় মালয়েশিয়া সরকার। সেই আশ্বাসে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৭৭৬ জন ভাগ্যান্বেষী নিবন্ধন করেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই খরচ হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। নিবন্ধনকারীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩৬ হাজার ৩৮ জনকে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিতদের তিন ভাগে ভাগ করে প্রথম ধাপে রাখা হয় ১১ হাজার ৭৫ জন। দ্বিতীয় ধাপে ১১ হাজার ৭০৪ ও তৃতীয় ধাপে ১২ হাজার ৫৭৬ জন। তবে দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও মালয়েশিয়া থেকে ভিসা এসেছে মাত্র ১০ হাজার ৬৪ জনের। সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর ‍পর্যন্ত দেশটিতে গেছে ৮ হাজার ২৯৯ জন।

বিএমইটি সূত্রে আরো জানা যায়, সরকারিভাবে কম খরচে কর্মী নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলেও মালয়েশিয়া পর্যাপ্ত চাহিদাপত্র পাঠায়নি। এছাড়া বেসরকারি জনশক্তি রপ্তারিকারকেরাও ভেতরে ভেতরে সরকারি পর্যায়ে কর্মী পাঠানোর বিরোধিতা করতে থাকায় এবং সরকারও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারায় গত দুই বছরে ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিক পাঠাতে সক্ষম হয়নি। আগে তো এক মাসেও ভিসা আসতো না। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ভিসা আসায় আগের চাইতে একটু গতি এসেছে।

বিএমইটির সহকারী পরিচালক রেজুয়ানুল হক চৌধুরী দাবি, প্রায় প্রতিদিনই জি টু জি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাচ্ছে। দিন যতো যাচ্ছে যাওয়ার সংখ্যা ততো বাড়ছে। ফেরত আসা শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দারও একই দাবি করেন। জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়া কার্যকর হলে আরো গতি আসবে বলে মনে করেন তিনি।

তবে একচাটিয়া একটি সিন্ডিকেটকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতেই মূলত ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতি আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার।

তিনি  বলেন, ‘এই পদ্ধতির মাধ্যমে মূলত মালয়েশিয়ার একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানকে কর্মী পাঠানোর কাজের দায়িত্ব দেয়া হবে। আর বাংলাদেশের কিছু স্বার্থান্বেষী অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করার সুযোগ পাবে। যাদের কারণে সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। মালয়েশীয় ওই কোম্পানিটি এই স্বাধীন দেশে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। কাজ পেলে তারা বাংলাদেশে ও মালয়েশিয়ায় সেবাকেন্দ্র চালু করবে। তারাই কর্মীদের মেডিকেল, নিবন্ধনের কাজ, বাংলাদেশি নাগরিক কর্মীদের ভিসা প্রক্রিয়ার কাজ, পাসপোর্ট সংগ্রহ করে ভিসা স্টিকার অনুমোদনের কাজ করবে।’

বায়রার এই সভাপতি বলেন, ‘জি টু জি প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলার সময় বেসরকারিভাবে তথা বি টু বি পদ্ধতি করার আলোচনা করছি। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এক ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্তে ‘জি টু জি প্লাস’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব অভিযোগ আমরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছেও উপস্থাপন করেছি।  গত মঙ্গলবার মন্ত্রীর সঙ্গে এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের সঙ্গেই আছেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ‘

বায়রার এখন ১ হাজার ২০০ সদস্য। তারা চান সবাই যেন অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও লোক পাঠানোর সুযোগ পায়। তাহলে প্রতারণা ও একচেটিয়া থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি পাবে। আর অল্প সময়ে বেশি মানুষ পাঠানোও সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া। নানা অনিয়ম ও প্রতারণার কারণে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। এরপর ২০১২ সালের নভেম্বরে আবার নতুন করে সরকারিভাবে দুই দেশের মধ্যে কর্মী নেওয়ার চুক্তি হয়। জি টু জি পদ্ধতিতে এক জন শ্রমিকের মালয়েশিয়া যেতে সর্বোমোট খরচ নির্ধারণ করা হয় ৩২ হাজার পাঁচশ টাকা।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.