শিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

নতুন এমপিভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৬ শতাধিক শিক্ষকের চাকরি অনিশ্চয়তায়

২০০৫ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মোছা. বেলোয়ারা খানম। শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজপথেও আন্দোলন করেছেন তিনি। মাগুরা সদরের এ এন সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক প্রায় বিনা বেতনে ১৯ বছর চাকরির পর জানতে পারলেন এমপিও জটিলতায় তার চাকরি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। শুধু বেলোয়ারাই নন এমন বিপাকে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৬৩২ জন শিক্ষক।

নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেডারেশনের সাবেক মহিলা সম্পাদিকা মোছা. বেলোয়ারা খানম জানান, ২০০৪ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০০৫ সালের ৫ জানুয়ারি। এরপর নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে প্রায় বিনা বেতনেই চাকরি করছেন ১৯ বছর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১০ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালে নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ২৩ অক্টোবর একযোগে ২ হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এবং পরে আরও সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়।

নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে ২০১৮ সালের নতুন জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী করোনার ছুটির মধ্যেই শিক্ষক এমপিওভুক্তি শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু ২০০৪ বিধিমালায় নিয়োগ পাওয়া কম্পিউটার শিক্ষকরা আটেকে যান ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায়।

২০০৪ সালের বিধিমালায় মাধ্যমিক পর্যায়ের একটি প্রতিষ্ঠানে একজন কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগ করার বিধান ছিল। ২০১৮ সালের বিধিমালায় সর্বপ্রথম নিম্ন-মাধ্যমিক স্তরের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের একজন শিক্ষক নিয়োগের বিধান চালু হয়। তবে কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তর দুস্তরের জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির শিক্ষকের পদ একটি।

এই পরিস্থিতিতে যদি নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কাছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষকের চাহিদা দেয় তাহলে ২০০৪ সালের বিধিমালায় আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের আর পদ থাকবে না সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ফলে চাকরি হারাতে হবে সবাইকেই।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিম্ন-মাধ্যমিকের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষকদের চাহিদাপত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে পদটি সংরক্ষণ করা থাকবে। সেক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। তবে চাহিদা দিলে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে গেলে আগে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক সমস্যায় চাকরির অনিশ্চয়তায় পড়বেন।

এদিকে এই পরিস্থিতি বুঝে কোনও কোনও শিক্ষক মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করে ইতোমধ্যেই এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে জানান মোছা. বেলোয়ারা খানম। ওইসব শিক্ষকরা যে ক্যাটাগরিতে এমপিও পেয়েছেন অন্য সব শিক্ষককে একইভাবে এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
২০০৪ সালের বিধিমালা অনুযায়ী কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মাগুরার মোহাম্মদপুরে বেথুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক এমপিুভুক্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন। তিনি কীভাবে পেলেন অন্যরা কেন পাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্যরা কেনও পাচ্ছে না তা তো বলতে পারবো না।’

এদিকে শিক্ষকদের এই চাকরির অনিশ্চয়তায় বিষয়টি বিবেচনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সমাধান চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর থেকে সম্প্রতি একটি পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এই অনিশ্চয়তা দেখে অনেক শিক্ষক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষক গোপনে এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন শিক্ষকরা।