শিক্ষা-সংস্কৃতিসারাদেশ

ধর্ষণ মামলায় খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য কারাগারে

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য (ভিসি) ড. শহীদুর রহমান খানকে ধর্ষণ মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার (৮ মে) বিকেল ৩টায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক আব্দুস ছালাম এ আদেশ দেন। ওই আদালতের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদ আহম্মেদ বলেন, ‘ভিসি ড. শহীদুর রহমান খান আজ জামিনের আবেদন করেছিলেন। তবে বিচারক তা নামঞ্জুর করেছেন।’

গত রোববার (৭ মে) একই মামলায় স্থায়ী জামিন পেয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার। এর আগে গত ১৩ মার্চ খুকৃবির সাবেক উপাচার্য ও রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-৩ অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তা। তাতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগী হিসেবে অভিযোগ করা হয়। সেদিন আদালত আদেশে, পরের দিন সোনাডাঙ্গা থানায় মামলার এজাহার গ্রহণ করা হয়। তবে ওই মামলায় তারা এতদিন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে ছিলেন। গত রোববার উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়।

আদালত সূত্রে জানা যায়, শহীদুর রহমান উপাচার্য থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী অফিসের পঞ্চম তলায় আবাসিকভাবে থাকতেন। সেখানে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রেজিস্ট্রার ওই নারীকে উপাচার্যের খাবারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেন। ওই নারী প্রতিদিন শহীদুর রহমানের কাছে খাবার পৌঁছে দিতেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, খাবার সরবরাহকালে তাকে বিভিন্ন সময় অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকেন শহীদুর রহমান। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় খাবার দিতে গেলে পূর্ব থেকে পরিকল্পিতভাবে রেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন শহীদুর রহমান। পরে রেজিস্ট্রার ওই নারীকে বলেন, ‘আজকের ঘটনা তুমি কাউকে বলবে না, তাহলে তোমার চাকরি থাকবে না, আর স্যারকে বলে স্যারের সঙ্গে তোমাকে বিবাহ করিয়ে দেব। তুমি তোমার স্বামীকে তালাক দিয়ে দাও।’

অভিযোগকারীর দাবি, পরে তিনি চাকরির কথা বিবেচনা করে ও সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে স্বামীকে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর থেকে ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ওই নারীর সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মেলামেশা করতে থাকেন শহীদুর রহমান। এক পর্যায়ে তার উপাচার্য পদে মেয়াদ শেষ হলে তিনি বদলি হয়ে যান এবং ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।’

আদালতে উপস্থাপন করা অভিযোগে আরো জানা যায়, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুর রহমান খুলনায় এলে ওই নারী তার সঙ্গে দেখা করেন। এক পর্যায়ে শহীদুর রহমানের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে বিয়ের আকুতি জানান। তবে তিনি এতে রাজি হননি। পরে ওই নারী স্বজনদের বিষয়টি জানিয়ে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গ্রহণ না করে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারী আদালতের দ্বারস্থ হলে বিচারক সোমবার থানাকেই এজাহার গ্রহণের নির্দেশ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগকারী নারী প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোরকিপার হিসেবে চাকরি করতেন। পরে তাকে উপাচার্য শহীদুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। শহীদুর রহমান উপাচার্য পদে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তার মেয়াদ শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে নিজের বাড়িতে থাকেন।