Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

দুর্যোগ দুর্ঘটনায় বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে মানুষের পাশে থাকুন- প্রধানমন্ত্রী

24ঢাকা: সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াত যখন দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও চালিয়ে যাচ্ছিলো তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জনগণের পাশে ছিলো, এ কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবেই যে কোন দুর্যোগ-দূর্ঘটনায় বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াতে হবে। এটাই ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কুচকাওয়াজ ও বিশেষ মহড়া প্রদর্শন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় জানান, ২০১৬ সালে দেশে মোট ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা হবে ৫৪৯টি আর বর্তমানের ৮ হাজার ৩৫৪ জন জনবল বেড়ে প্রায় ১৫ হাজারে উন্নীত হবে।

তিনি বলেন, এরফলে দেশের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

২০০৯ সালে সরকার গঠন করার প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার সিদ্ধান্তের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারই অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত দেশে ১০০টি নতুন ফায়ার স্টেশন নির্মাণ ও চালু করা সম্ভব হয়েছে।

‘দুর্যোগ-দুর্ঘটনা মোকাবেলায় জনসাধারণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা আরও জোরদার করা’ এবারের ফায়ার সার্ভিস সপ্তাহের এই প্রতিপাদ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এ উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হব।’

রানা প্লাজা ভবন ধস; নিমতলী, তাজরীন ফ্যাশনসহ বসুন্ধরা শপিং মলের অগ্নিকা-ের উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে অনেক বড় বড় অগ্নি, নৌ ও সড়ক দুর্ঘটনা, ভূমিধস এবং ভবনধসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা দক্ষতা ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।

তবে পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সকল আইন শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দুর্যোগকালীন ভ’মিকার জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বহুতল ভবনের অগ্নি নির্বাপণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ কাজের জন্য ইতোমধ্যে ২০০ কোটি টাকার সর্বাধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও যন্ত্রপাতি ও সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

ভূমিকম্প দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশেষ করে বিধ্বস্ত ভবনে দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫টি আন্তর্জাতিক মানের আরবান সার্চ এন্ড রেসকিউ টিম গড়ে তোলা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এ জন্য ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেশে ও বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সহায়ক শক্তি হিসেবে সারাদেশে ৬২ হাজার কমিউনিটি ভলান্টিয়ার তৈরি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ভলান্টিয়ারের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। যারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

সারাদেশের হাইওয়েতে ৭৯টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে ভ্রাম্যমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স র‌্যাপিড রেসকিউ স্কোয়াড দায়িত্ব পালন করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  এছাড়াও নৌ-দুর্ঘটনার জন্য আধুনিক উদ্ধারকারী রেসকিউ ফ্লোট, রেসকিউ স্পিড বোট, জেমিনি বোট ইত্যাদি সংগ্রহের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স তাদের ওয়াটার রেসকিউ ক্যাপাসিটি বহুলাংশে বাড়িয়েছে।

গার্মেন্টস সেক্টরসহ শিল্পখাতে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন শিল্প-কারখানার প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কর্মীকে অগ্নি নির্বাপণ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শন বাড়াতে ২১৮টি ইন্সপেক্টর পদও সৃষ্টি করা হয়েছে, জানান প্রধানমন্ত্রী।

তার সরকার এ অধিদপ্তরের কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ রেশন ও ৩০% ঝুঁকিভাতা চালু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কর্মীদের খাকি পোশাক পরিবর্তন করে মর্যাদাপূর্ণ নতুন পোশাক প্রবর্তন করা হয়েছে।

সততা, দেশপ্রেম ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যেতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কোন দুর্যোগ-দূর্ঘটনায় বিপন্ন মানুষের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত দাঁড়াবেন। এটি আপনাদের পরম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

নভেম্বর ১১, ২০১৫

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.