দুই সহস্রাধিক সন্ত্রাসী-গডফাদারের তালিকা ইসিতে
পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের মাঠে দুই সহস্রাধিক সন্ত্রাসী ও ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে গডফাদার রয়েছে ৬৩৭ জন।
নির্বাচনী এলাকায় তারা বোমাবাজি, ভয়ভীতি দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করার পাশাপাশি কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান করতে পারে।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংস্থার পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সন্ত্রাসীরা যেন ভোটকেন্দ্রে দখল না করতে পারে তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। এছাড়া ক্যাডার মদদদাতা গডফাদারদের বিরুদ্ধ আইননানুগ ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ইসিতে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২ হাজার ২৯ সন্ত্রাসী ও ক্যাডার নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিএনপি- এক হাজার ১২১ জন। এরপর আওয়ামী লীগের ৫৬১, জামায়াত-শিবিরের ২১১, জেএসএস’র ১০, জাতীয় পার্টির চার, পিসিপ’র ১ ও অন্যান্য ১২১ জন। এতে আরও বলা হয়েছে, সক্রিয় এসব সন্ত্রাসীদের আশ্রয়দাতা বা গডফাদার রয়েছে ৬৩৭ জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২১১ জন, বিএনপির ৩১২, জামায়াত-শিবিরের ৭৭, পিসিপি ১ ও জেএসএস একজন এবং অন্যান্য ৩৫ জন।
গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দুই পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ও ২০৪ পৃষ্ঠার তালিকা সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে সক্রিয় সন্ত্রাসী, গডফাদার ও আশ্রয়দাতাদের নাম, ঠিকানা ও রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে শিগগির অভিযানের সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়, পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ দলসমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারকালে স্থানীয় সন্ত্রাসী-ক্যাডাররা সক্রিয় রয়েছে।
সক্রিয় সন্ত্রাসীরা সাধারণ জনগণকে ভয়ভীতির মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে দুই পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে গোয়েন্দা সংস্থাটি জানায়, সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখায়। তারা পাইপগান, রিভলপার, বন্দুক, শুটারগান, পিস্তল, কাটা রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে।
২৩৩ পৌর নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নামার আগেই এ তালিকা এল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খানের হাতে। পৌর নির্বাচনে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার-ভিডিপি, এপিবিএন ও সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতিমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে চিহ্নিত অপরাধীদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিভাগ, জেলা ও উপজেলাওয়ারি এ তালিকা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, যাতে করে পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
কমিশন সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী মাঠে নামলে নিয়মিত ব্যবস্থার পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অভিযান পরিচালনা করবে।