ত্রিশ লাখ শহীদের তালিকা চান গয়েশ্বর

জানুয়ারি ২৮, ২০১৬

14‘খালেদা জিয়া কি ফেরারি? তাঁর কি কোনো পরিচয় নেই?’ এ প্রশ্ন বিএনপি নেতাদের। আর দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার আগে ত্রিশ লাখ শহীদের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরাফাত রহমান কোকোর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে গয়েশ্বর সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘গুনে গুনে ত্রিশ লাখ শহীদের নামের তালিকা পত্রিকায় প্রকাশ করুন। তারপর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত পারেন, প্রয়োজনে ত্রিশ লাখ মামলা দিন। সত্য যত নির্মমই হোক, সত্য সত্যই। গল্প আর ইতিহাস এক কথা নয়।’ গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। তাঁদের তালিকা থাকবে না কেন? প্রতিটি এলাকায় নাম উল্লেখ করে স্মৃতিস্তম্ভ করতে হবে। শহীদদের পরিবার অধিকার রাখে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার।’ শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্যের সমর্থনে দলের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য না দেওয়ার সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘কষ্ট হয়, নেত্রী যখন একটি কথা বললেন, আমরা তখন সবাই মুখে তালা মারলাম। যখন মামলার ভয়ে আমরা কথা বলি না, তখন বিবেচনা করতে হবে, আমাদের বিএনপি করার যোগ্যতা কতটুকু রয়েছে।’ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। মামলার ভয়ে কৌশল না করে রাজপথে থাকতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘খালেদা জিয়া সন্তানের মায়া ত্যাগ করে জনগণ ও দলের নেতাকর্মীদের পানে তাকিয়ে আছেন। আপনারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েন না।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) রিপোর্ট প্রসঙ্গে গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘এটা বলতে পারি, এতে সরকার সন্তুষ্ট হবে না। দুর্নীতিতে এক ধাপ এগিয়েছে মানে বোঝাই যায় কী হচ্ছে।’ আরাফাত রহমান কোকোর স্মৃতিচারণা করে গয়েশ্বর বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে বেড়ে ওঠা সত্ত্বেও আরাফাত রহমান ছিলেন শান্ত স্বভাবের একজন মানুষ। ভালো ক্রীড়া সংগঠক।’ দোয়া মাহফিলে ড. আবদুল মঈন খান, ফজলুল হক মিলন, আবুল খায়ের ভুইয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কাজী আবুল বাশার, আবদুল লতিফ জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে অল কমিউনিটি ফোরাম নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে ‘রায়, সংবিধান, নির্বাচন ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া কি ফেরারি? তাঁর কি কোনো পরিচয় নেই? তিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বাড়ির গেটে সমন না টাঙিয়ে কি সম্মানজনক ব্যবস্থা করা যেত না?’ হাফিজ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে খালেদা জিয়া কোনো সংখ্যার কথা বলেননি। তাঁদের সম্মানহানি হয় এমন কিছু তিনি বলেননি। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হলো, যা হাস্যকর। এ মামলায় সারা বিশ্ব চমকে গেছে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের হুংকার বেশি শোনা যাচ্ছে। এটা খারাপ আলামত।’ সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার মো. আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে এতে আরো বত্তৃদ্ধতা করেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাবিরুল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘পাগলের লজ্জা থাকলেও ইনুর কোনো লজ্জা নেই। ইনু বিএনপির চেয়ারপারসনকে জেল ও আদালতের বারান্দার ভয় দেখান। ইনু সাহেব বুঝেশুনে কথা বলবেন। এই দিন শেষ দিন নয়, সামনে আরো দিন আসবে। তখন আপনার ঠাঁই কোথায় হবে?’ দুদু বলেন, ‘এক-এগারোর সরকার ও শেখ হাসিনা জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের নানা ষড়যন্ত্র করেছেন। এরই অংশ হিসেবে তাঁরা আরাফাত রহমান কোকোকে কৌশলে হত্যা করেছেন।’ এতে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মুনীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাসাস আয়োজিত জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কতজন শহীদ হয়েছেন, কতজনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে তার হিসাব নেই। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ আনতে চান, তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও আপনাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের এজেন্ডা আনবে।’ গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান দলীয় নন, বাংলাদেশের নেতা। তাঁদের নিয়ে কোনো বিতর্ক করা যাবে না।’ তিনি বলেন, বিএনপিতে যত সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, আওয়ামী লীগেও তত নেই। সংগঠনের সভাপতি এম এ মালেকের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বত্তৃদ্ধতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। গোলটেবিল পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.