স্পটলাইট

ঢাবিতে গভীর রাতে বিএনপি নেতা রিজভীর নেতৃত্বে গোপন বৈঠক

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গভীর রাতে বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক গোপন বৈঠকের ঘটনা ফাঁস হয়েছে! ঘটনার দু‘দিনের মাথায় আজ রোববার (২০ জুন) তারেক রহমানের আস্থাভাজন বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের কট্টরপন্থী অংশের আয়োজনে মধ্যরাতের এ বৈঠকের খবর ফাঁস হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাত ১০টায় সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্লাবে রাত ১ টা পর্যন্ত গোপন এ বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ, ছবি নাশকতার পরিকল্পনার প্রমান দিচ্ছে বলে পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন।

অনুমতি ছাড়া বহিরাগত লোকজনকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈঠক। এ বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাদা দলের অনেক শিক্ষকও। কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদের সাদা দলের শিক্ষকদের কয়েকজন ইতোমধ্যেই অপর অংশের গোপন বৈঠকের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তুলেছেন। বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ, ছবি এসেছে বাহান্ন নিউজের হাতে। যেখানে গভীর রাতে দলবল নিয়ে রিজভীর নেতৃত্বে বৈঠকের প্রমান মিলছে। বৈঠকে গিয়েও যারা পরিস্থিতি দেখে দ্রুত চলে এসেছেন এমন দু‘জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘রুহুল কবীর রিজভী ও ঢাবির ৪/৫ জন শিক্ষক ছাড়া বৈঠকে আসা অন্যদের তারা চিনেন না। তরুন বেশ কিছু লোকজনও ছিলো বৈঠকে। গভীর রাতে এভাবে বৈঠক করার পক্ষে আমরা ছিলাম না তাই দ্রুত সেখান থেকে চলে এসেছি।’ রিজভী ও ৪/৫ জন শিক্ষক ছাড়া কেউ পরিচিত নন বলে জানিয়েছেন ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা ক্লাবের কর্মকর্তা কর্মচারিরাও। বৈঠকে ৪/৫ জন অপরিচিত মাহিলাও ছিলেন। তাদের কাউকে তারা চিনেন না বলে জানান কর্মকর্তা কর্মচারিরা। বৈঠকের জন্য একটি গরু জবাই দিয়ে ভুড়ী ভোজেরও ব্যবস্থা করা হয়।

কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে রিজভী সামনে থাকলেও এর আয়োজনে ছিলেন ঢাবির সাদা দলের শীর্ষ নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক ড.এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। তিনি আবার ঢাবি ক্লাবেরও সভাপতি।

তবে আয়োজনে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে অবমাননার দায়ে চাকরিচ্যুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: মোরশেদ হাসান খান। তিনিও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বিএনপি জামায়াতপন্থী ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর যথাক্রমে সভাপতি ও মহাসচিব। তারেক রহমানের সবচেয়ে কাছের শিক্ষক নেতা হিসেবে পারিচিত চাকরিচ্যুত শিক্ষক ড. মো: মোরশেদ হাসান খান।

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে অবমাননার দায়ে চাকরিচ্যুত এ শিক্ষক নির্বিঘ্নেই বসবাস করেন ঢাবি আবাসিক কোয়ার্টারে। কিভাবে আছেন এবং প্রশাসনই বা এখানে রেখে দলীয় রাজনীতি করার সুযোগ কেন দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের স্বাভাবিক সার্ভিস চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। নিয়ম অনুসারে কেউ অনুষ্ঠান করলেও সাধারন সম্পাদকের কাছে আবেদন বা তার অনুমতি দিতে হয়। তবে ১৮ জুনের এ কর্মসূচির বিষয়ে তাকে কিছু জানানোই হয়নি বলে বাহান্ন নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ক্লাবের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুর রহীম। তিনি বলেছেন, ‘রাতে বৈঠক করার বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। নিয়ম অনুসারে সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমাকে জানানোর কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। পরে আমি যখন জানতে পারি তখন সভাপতিকে আমি জিজ্ঞেস করেছি আমায় না জানিয়ে কোন কর্মসূচি করা হয়েছে কিনা। তিনি পরিস্কার করে কিছু বলেনি। তবে কিছু পরিচিত লোকজনকে নিয়ে বলেছিলেন বলে বলেছেন।’

যদিও এক প্রশ্নের জবাবে এ শিক্ষক বলেছেন, ‘আমি জানি বৈঠক সাড়ে ১০টায় হয়েছে। রাত ১টা পর্যন্ত না।’ বাহান্ন নিউজের কাছে আসা ভিডিও ফুটেজ ও প্রক্টরের কথায় পরিস্কার হয়েছে বৈঠক হয়েছে অন্তত রাত ১টা পর্যন্ত। রাত ১০টায় শুরুই হয়েছে বৈঠক। আপনি বলছেন সাড়ে ১০টায় বৈঠক। এ তথ্য জানালে অধ্যাপক আব্দুর রহীম বলেন, ‘আপনি প্রক্টরকে জিজ্ঞেস করেন সে আমার সঙ্গে কথা বলে কোন তথ্য নিয়েছেন কিনা। নেয়া উচিৎ ছিলো।’ তার অবস্থানের বিষয়ে কথা বলে পরে জানা গেছে, ঐ বৈঠক চলাকালেই অধ্যাপক আব্দুর রহীমকে জানানো হয়েছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে বিএনপি নেতাদের নিয়ে মধ্য রাতে বৈঠক নিয়ে উদ্বেগে আছেন শিক্ষক কর্মকর্তারা। ফুটেজ সংগ্রহ করে যাছাই বাছাই চলছে। কারা কারা ছিলেন তা অনেকটাই এখন পরিষ্কার। কর্তৃপক্ষ এ বৈঠক নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেছেন, ‘অনেক প্রশ্ন। যেখানে রাত ১০টার সময় সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায় সেখানে এভাবে রাত ১টা পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক কেন? এমনিতেই দেশে নাশকতামূলক নানা আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার মধ্যে এ বৈঠক স্বাভাবিক মনে হচ্ছেনা। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। একই সঙ্গে ক্লাব কর্তৃপক্ষের দায় দায়িত্ব অবস্থান নিয়ে আমার প্রশ্ন, তারা ঠিক কাজ করছে কিনা।’

এদিকে ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনার জানার পরই আমি প্রক্টরকে বলেছি ঘটনা খতিয়ে দেখতে, ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে একটা পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট দিতে। আমার এখতিয়ারের মধ্যে যা আছে সেভাবে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সভাপতিকে তার সেলফোনে যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। আজ ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরে সভাপতিসহ কেউ কেউ অন্য শিক্ষকদের কাছে দাবি করেছেন তাদের পরিচিত একজনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান করেছে তারা। তবে কার জন্মদিন, কি তার পরিচয়, এবং কেনইবা গভীর রাতে অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হবে সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে।সূত্র:বাহান্ন নিউজ