Leadশিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

ঢাকা কমার্স কলেজের দুই উপাধ্যক্ষের নিয়োগ বাতিলে রুল জারি

রাজধানীর মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কমার্স কলেজের দুই উপাধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম চুন্নু (প্রশাসন) ও উপাধ্যক্ষ (বিজ্ঞান) ড. আবু মাসুদের নিয়োগ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কলেজ পরিদর্শক,  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ১৪ জানুয়ারী বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ জারি করেন।

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি অভিভাবক মো. ইলিয়াছ জনস্বার্থে এই রিট দায়ের করেন।  গত ১৪ জানুয়ারি রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ।

আইনজীবী হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ঢাকা কমার্স কলেজের দুই উপাধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম চুন্নু (প্রশাসন) ও উপাধ্যক্ষ (বিজ্ঞান) ড. আবু মাসুদের নিয়োগ কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কলেজ পরিদর্শক,  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিকে বেআইনিভাবে নিয়োগ দেওয়া দুই জন উপাধাক্ষ্যকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।  বিবাদীগণকে আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রিট বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসরণ না করেই  ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর মো. শফিকুল ইসলামকে নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ড. আবু মাসুদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই।

এছাড়া রিটে ঢাকা কমার্স কলেজে টিউটোরিয়াল প্রোগ্রামের নামে বছরে ১২ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাত করা এবং কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সাইদুর রহমান মিঞার বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে ঢাকা কমার্স কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দফায় দফায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ থাকলেও কলেজ গভর্নিং বডি অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

১২ কোটি টাকার  দুর্নীতি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজে টিউটোরিয়াল প্রোগ্রামের নামে প্রতিবছর ১২ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর(মাউশি)। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যের কমিটিকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই তদন্ত চলাকালেই সিনিয়র শিক্ষকসহ ৫ জনকে শিক্ষককে অব্যহতি দেন রুটিন দায়িত্ব থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

অধ্যক্ষ থাকতেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ

চলতি বছর জানুয়ারিতে অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় জাতীয় দৈনিকে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত বছর অক্টোবরে নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যাপক ড. এ এফ এম শফিকুর রহমানকে। তবে নিয়োগের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিধিবিধানের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না করেই তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে পরিচালিত হয় নানা অনিয়ম।  এতে অধ্যক্ষ বাধা দিলে তাকে রেখেই উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) মো. শফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ড. আ ফ ম শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাকে নিয়োগ দেওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান মেনে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আমাকে কয়েক দিনের মধ্যেই গভর্নিং বডি থেকে বলা হলো হিসাব পারিচালনা করবেন না। তারপর তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর নিয়োগসহ অনেকের নিয়োগেই ফাঁকি রয়েছে। ’

উপাধ্যক্ষ নিয়োগে দুর্নীতি

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শফিকুল ইসলাম ছিলেন উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন)। তার নিয়োগ নিয়েও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পত্রিকায় কোনও বিজ্ঞাপন না দিয়েই। প্রথমে ২০১৫ সালের ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, পরে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে অন্য একজন উপাধ্যক্ষ (বিজ্ঞান) অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত অভিযোগে। 

বাংলা বিভাগের প্রধানের যৌন হয়ারনি

কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে একই কলেজের নারী শিক্ষক ও একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়ারনির অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিচার দাবিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।