শীর্ষ সংবাদ

ডাক্তার নেই তবুও দেশে হাসপাতাল বাড়ছেই !

0,,16165994_303,00

দেশে সরকারি স্বাস্থ্য সেবার অপ্রতুলতা ও অব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের মালিকরা। এতে নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবার পিছনে অর্থ ব্যয় করছেন ঠিকই , কিন্তু পাচ্ছেনা মানসম্মত সেবা।

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬৮০টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক আছে ৩,৪৩৫টি। রোগ নির্ণয়ের জন্য বেসরকারি ডায়াগনিস্টিক সেন্টার আছে ৭,২৯৩টি। এসব হাসপাতাল বা ক্লিনিককে ঘিরেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসার কাজ চলে৷ বলা হয়ে থাকে, ১০ হাজার লোকের জন্য আছে ৪টি বেড। সরকারি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার চিত্রতো সবার জানা৷ তাহলে দ্রুত বেড়ে ওঠা বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্য সেবার চিত্রটি কেমন?

কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের চিত্র

ঢাকার অদূরে সাভারে লাইলি জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার৷ এই বেসরকারি হাসপাতালে কোন চিকিৎসক নেই৷ হাসপাতালের মালিক তবুও চিকিৎসা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রোগী এলে পরিস্থিতি বুঝে তিনিই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন৷ আর খুব প্রয়োজন হলে টেলিফোনে কোন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেন। এই যখন অবস্থা তখন তিনি একজন মহিলা রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাম করিয়েছেন। কেন করিয়েছেন, জানতে চাইলে ক্লিনিকের মালিক কামাল আহমেদ বলেন, হাসপাতালে তেমন রোগী আসেন না তাই ডাক্তারও রাখেন না। খরচ পোষায় না। তবে রোগী এলে যদি প্রয়োজন মনে করেন তাহলে ডাক্তারকে খবর দেন। তিনি দাবি করেন, হাসপাতালটি বন্ধ করে দেবেন। তবে তার ক্লিনিকের লাইসেন্স আছে।

আরেকটি বেসরকারি ক্লিনিকের নাম রাবেয়া হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার৷ এর অবস্থান সাভার আশুলিয়া মহাসড়কের পাশে। এই হাসপাতালে কোন ডাক্তারতো নেইই, নেই কোন প্যাথলজিষ্ট। কম্পিউটার অপারেটর সোহেল আহমেদ নিজেই রক্তসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আর চিকিৎসকের আগে থেকেই সই করা কাগজে পরীক্ষার ফলাফল বসিয়ে দেন। পাশে শ্রীপুর ডায়াগনিস্টিক সেন্টার কোন অনুমোদন না নিয়েই হাসপাতাল এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টার চালু করে দিয়েছে। মালিকের দাবি, তিনি অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। আশা করছেন অনুমোদন পাবেন। সাভারের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের নাম সেন্ট্রাল হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালের কোন অনুমোদন না থাকলেও তারা ব্যবসা করছে ৫ বছর ধরে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

সাভারের বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ আচার্য জানান, সাভার এবং আশুলিয়া এলাকায় কমপক্ষে ১০০ ক্লিনিক এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টার আছে। এর একটি অংশের কোন বৈধ অনুমতি নেই। আর যাদের আছে তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স , চিকিৎসা উপকরণ নেই। এই এলাকায় সরকারি স্বাস্থ্য সেবা বলতে ২০ বেডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স৷ আর সেখানেও ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়া যায়না৷ তাই এই এলাকার বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার চাহিদার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ক্লিনিক ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, অনেক ক্লিনিকে ভুয়া ডাক্তারও আছে৷ যাদের এমবিবিএস ডিগ্রী না থাকলেও প্রচারপত্রে তাই লিখছেন।

এই অবস্থা শুধু সাভার-আশুলিয়ার নয়, ঢাকাসহ সারা দেশের৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. এস এম ইব্রাহিম জানান, তারা ঢাকায়ও এধরণের কিছু অবৈধ ক্লিনিক এবং ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন। এজন্য তাদের একটি মনিটরিং টিমও রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় সারাদেশে তাদের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব হয়না।

মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ড. মনিলাল আইচ জানান, এই ধরণের ক্লিনিকে জটিল অস্ত্রোপচারও করা হয়৷ যা রোগিকে মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দেয়। তিনি জানান, এসব ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা এবং ভুল রোগনির্ণয় হয়৷ যা পুরো স্বাস্থ্য সেবাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

ডাক্তার ও যন্ত্রপাতি ভাড়া করা হয়

তাহলে তারা সরকারের অনুমতি পায় কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক জানান, লাইসেন্স দেয়ার আগে যখন টিম পরিদর্শনে যায় তখন ভাড়া করে চিকিৎসক আনা হয়। এমনকি প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান এবং যন্ত্রপাতিও আনা হয় ভাড়ায়। যা বোঝার উপায় থাকেনা। তবে কিছু ক্লিনিক মালিক জানিয়েছেন তারা লাইসেন্স পেতে সরকারের প্রচলিত ফি’র বাইরে বাড়তি মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেন। আর লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ক্লিনিক চলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায়। সূত্র: ডয়েচ ভেলে

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.