ডনকে টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন ব্যারিস্টার শাকিলা
আগস্ট ২১, ২০১৫ ঢাকা জার্নাল (চট্টগ্রাম): জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের শীর্ষ নেতা মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নগদ টাকা জমা দেয়ার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। রিমান্ডে থাকা শাকিলা জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও জঙ্গি অর্থায়নের জন্য তা দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন।
রিমান্ড মঞ্জুরের পর বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতেই শাকিলাসহ তিন আইনজীবীকে নিজেদের হেফাজতে নেয় র্যাব। জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে একাধিক টিম তাকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদ এখনও অব্যাহত আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের পরিচালক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নগদে টাকা জমা দেয়ার বিষয়ে সব তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে আছে। শাকিলা ফারজানা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তাকে কারা টাকা দিয়েছে, তাদের দেয়া টাকা কোন কোন খাতে খরচ হত, এর সঙ্গে আরও কারা আছে সেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে টাকা দেয়ার বিষয়টি শাকিলাসহ তিন আইনজীবীই অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। পরে র্যাব কর্মকর্তারা প্রমাণপত্র উপস্থাপন করলে তিনি স্বীকার করে নেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে শাকিলা দাবি করেছেন, তিনি আইনজীবী হিসেবে হেফাজতে ইসলাম এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের মামলা পরিচালনা করেন। মামলা পরিচালনার জন্য টাকাপয়সা লেনদেন হয়েছিল।
জানতে চাইলে মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শাকিলা কখনোই হামজা ব্রিগেডের মামলা পরিচালনা করেননি। অনেক আগে হেফাজতের মামলা পরিচালনা করতেন।
১৮ আগস্ট রাতে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে তিন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা (৩৯)। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য পদেও আছেন তিনি।
অপর দু’জন হলেন অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন (৩০) এবং অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন (২৫)।
এদের মধ্যে শাকিলা ফারজানা ও হাসানুজ্জামান লিটন সুপ্রিম কোর্টে এবং মাহফুজ চৌধুরী বাপন ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত আছেন।
র্যাবের দাবি, তিন আইনজীবী চার ধাপে মনিরুজ্জামান ডনসহ কয়েকজনের অ্যাকাউন্টে নগদে এক কোটি আট লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা দিয়েছেন ৫২ লক্ষ টাকা। তিনি প্রথম ধাপে ২৫ লক্ষ ও পরবর্তী ধাপে ২৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। হাসানুজ্জামান লিটন ৩১ লক্ষ টাকা এবং বাপন দিয়েছেন ২৫ লক্ষ টাকা।
তবে শাকিলার আইনজীবী সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তারের দাবি, মনিরুজ্জামান মাসুদ ওরফে ডন হেফাজতে ইসলামের মামলা পরিচালনার বিষয়ে আসামিপক্ষের হয়ে শাকিলা ফারজানার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। মামলা পরিচালনার জন্য তিনি শাকিলাকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। পরে শাকিলা আবার ওই টাকা ডনের অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়েছিলেন। ফেরত দেয়া টাকাকে জঙ্গি অর্থায়ন হিসেবে ধরে নিয়েছে র্যাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য বিশাল অংকের টাকা নগদে লেনদেন হবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেরাও বলেছে, এটা সন্দেহজনক লেনদেন। তারাও এ বিষয়ে অনুসন্ধান করবে।
বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে তিন আইনজীবীকে বাঁশখালী উপজেলার লটমণি পাহাড়ে শহীদ হামজা ব্রিগেডের গোপন সামরিক আস্তানা থেকে অস্ত্র-বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। বাঁশখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদ হোসেন তাদের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী এলাকায় ‘আল মাদরাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি কওমি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। মাদ্রাসাটিকে হামজা ব্রিগেডের তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর লটমণি পাহাড় থেকে ৫ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি নগরীর হালিশহর থানার একটি আবাসিক এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
১২ এপ্রিল (রোববার) রাতে নগরীর কোতয়ালি থানার মিডটাউন আবাসিক হোটেলে অস্ত্র কেনাবেচার সময় বিক্রেতা মোজাহের হোসেন মিঞা (৩৫) এবং বাঁশখালীতে জঙ্গি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাব্বির আহমেদ ওরফে মুহিবকে (২৩) গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতে আকবর শাহ থানার একে খান মোড়ে শ্যামলী বাস কাউন্টার থেকে মো.কামাল উদ্দিন ওরফে মোস্তফা (২৪) এবং আশরাফ আলীম ওরফে আদনানকে (২৫) আটক করা হয়।
ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ২০, ২০১৫