Leadকর্পোরেটসব সংবাদ

জেলে না পাঠিয়ে ঋণ খেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চার অর্থমন্ত্রী

ঢাকা জার্নাল: জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করতেই খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার সুযোগ দিতে চান অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার (৬ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

বিকালে আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকই ধারণা করছেন যে ভালো-মন্দ এক হয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো-মন্দ কখনও এক হবে না। আর যারা ভালো তাদেরতো কোনও এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না। তবে সকলেই যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন তাহলে সবাই দিতে পারবেন।’

অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগে ২ শতাংশ কোনও বিষয় না। ২ শতাংশ শর্ত মেনেই তারা ঐক্যমত পোষণ করবে যে তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা এই শর্ত বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি সেটা হলো কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায় করা। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সকলকে টাকা দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবোই। এটা রাষ্ট্রের সকল মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘হাই কোর্টের রায়টি যখন আসবে তখন আমরা কার্যকর করবো। কার্যকর করতে গেলে আমাদেরকেও সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। রায়ে কিছু পরিবর্তন হবে। আমাদের কিছু বাড়তি চাহিদা আছে। আগে রায় আসুক। রায়ের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। বেশি জায়গা পরিবর্তন না মোটামুটিভাবে ঠিক আছে। কোর্ট আর আমাদের মাঝে কোনও রকম বিরোধ নেই। আমরা একই পক্ষ। আমরা যে কাজটি করতে যাচ্ছি সেটি দেশের মানুষের জন্য জনকল্যাণের জন্য। দেশে ব্যবসা বাণিজ্যবান্ধব আইন আমরা করতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ইস্যু রয়েছে তা একসঙ্গে করে ব্যাংকিং খাতটাকে দাঁড় করানোটাই হলো আমাদের উদ্দেশ্যে। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বর্তা হচ্ছে। আসলে আমদেরও কোথায় কোথায় ভুল আছে সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১০ এর উপরে যাবে না। এটা ৯ দশমিক ৭৫ হবে। অথ্যাৎ সিঙ্গেল ডিজিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ও বাজেটে সেটা উল্লেখ আছে। আমরা ব্যাংক ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ আদায় করবো। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ব্যাংক, ঋণ গৃহিতা, সরকার ও দেশের মানুষ যেন না ঠকেন। সে কাজ করতে হলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সবাইকে সম্পৃক্ত করে এ কাজটি করতে হবে। ’

ব্যাংকগুলো এখনও কোনও কমপাউন্ট সুদের হার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারিনি। তবে ব্যাংকগুলো করবে। যখন আমরা রায়ের কপি হাতে পাব। তখন কমপাউন্ট সুদের হার করতে বলা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবে না। এমন কোনও ব্যাংকের অস্তিত্ত্ব বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যদি না মানে সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। প্রয়োজনে মার্জস করা হবে এধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সুতরাং সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না এটা হতেই পারে না। তবে যারা মানবে তাদের আমাদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য আমাদের যে সুযোগ সুবিধাগুলো আছে তা দিয়ে সহযোগিতা করবো।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হলো গতবছরই তারা ব্যাংখ ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল। এজন্য তারা সরকারের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল সরকার তা পুরণ করেছে। এরমধ্যে অনেকেই সিঙ্গেল ডিজিটে আসছে। আবার কেউ কেউ আসেনি। তাদেরকে আসতে হবে, না হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাওকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তারা ব্যবসা করলে লাভ করবে কেউ কম কেউ বেশি করবে। কিন্তু রেইট সকলের এক হতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থানে আসতে এদেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের তাঁতি, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, কামার, কুমার, জেলে, সাংবাদিক সকলেইর অবদান রয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা সৌভাগ্যবান কারণ সুন্দর সময়ের মধ্যদিয়ে এগোচ্ছি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তাগুলো হচ্ছে সংস্কার। বিভিন্ন খাতে আমাদের সংস্কার মুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন পুজিবাজার, ব্যাংকিংখাত, ননব্যাংকিং খাত, এনবিআর, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। আমরা যদি সংস্কার না আনি তাহলে পিছিয়ে থাকবো। অন্যান্য দেশ এ সকল কাজ ২৫ বছর আগে করেছে। আমরা কিছুতেই কোন জায়গায় হাত দিতে পারিনি। সরকারি ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক এ নিয়ম মানছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি ব্যাংকও মানছে। তারাও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসছে। ’

ব্যাংকিং কমিশনের বিষয়ে কি ভাবা হচ্ছে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং কমিশন যে আমরা করবো সেটা বাজেটেও বলেছি। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্ডারেই ব্যাংকিং কমিশন করবো। শিগিরই করা হবে।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ৬, ২০১৯