জঙ্গি হামলার এক নম্বর টার্গেটে ড. জাফর ইকবাল
ঢাকা জার্নাল: জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ৩২ ব্যক্তি। এসব বিশিষ্টজনের মধ্যে এক নম্বর বা প্রধান টার্গেটে রয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। আর দ্বিতীয় টার্গেটে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুনতাসির মামুন।
এছাড়া ঢা্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমা্ন ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক ভিসি ড. একে আজাদ চৌধুরী, অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, সাংবাদিক আবেদ খান ও শ্যামল দত্ত, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ও রামেন্দ্র মজুমদার, গণজাগরণ মঞ্চের মূখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, ব্লগাররা, কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক জঙ্গি হামলার টার্গেটে রয়েছেন।
তবে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও ব্লাগাররা যে কোনো সময়ই হামলার শিকার হতে পারেন। আগেও নিরাপত্তা সতর্কতার অভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাই হামলার শিকার হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার দেওয়া প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গোপনীয় এ প্রতিবেদনে সম্ভাব্য হামলার ধরণও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশাসনে জঙ্গি ভাবাপন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবস্থান চিহ্নিত এবং অনুপ্রবেশ বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারকে। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ অন্যান্য দেশি জঙ্গিদের নেওয়া এই পরিকল্পনায় রয়েছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশে। দেশি ও বিদেশি স্বার্থন্বেষী মহল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এ অপতৎপরতাকে অব্যাহত রাখার সহযোগিতা দিচ্ছে।
তবে এ হামলা প্রতিরোধ এবং অপতৎপরতা রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি অব্যাহত রাখা হয়েছে। ড. জাফর ইকবাল এবং মুনতাসির মানুষকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কর্মস্থল এবং বাসা এলাকায় জঙ্গি তৎপরতার উপর গোয়েন্দা নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জঙ্গি হামলার টার্গেটে সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম রয়েছেন। সংসদ সদদ্যেদের মধ্যে রয়েছেন ইকবালুর রহিম।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ও সাবেক ভিসি ছাড়া অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, আরাফাত রহমান, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রয়েছেন প্রাণ নাশের এই সম্ভাব্য হুমকির তালিকায়।
বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন চিফ মেট্রেপলিটন ম্যাজিট্রেট বিকাশ সাহা।
সাংবাদিকদের মধ্যে আবেদ খান, শ্যামল দত্ত ছাড়াও রয়েছেন- মুন্নি সাহা,অঞ্জন রায়, মনজুরুল আহসান বুলবুল ও নবনিতা চৌধুরী।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তির তালিকায় নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রামেন্দু মজুমদার এবং সৈয়দ হাসান ইমাম রয়েছেন।
ব্লগারদের মধ্যে শাহিন রেজা, মাহমূদুল হক মুন্সি বাঁধন, আরিফ জেবতিক, ছাত্রনেতা বাপ্পাদিত্য বসু, কানিজ আকলিমা সুলতানা, এফএম শাহিন প্রাণনাশের হুমকির তালিকায়। আর সঙ্গীতা ইমাম অনেক আগেই প্রাণনাশে জঙ্গিদের হুমকি পেয়েছেন।
এছাড়া ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার কবির, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সভাপতি কামাল পাশা এই হামলার হুমকিতে রয়েছেন।
সম্ভাব্য হামলার ধরণ
সম্ভাব্য হামলার ধরণ প্রায় ক্ষেত্রেই আগের মতোই হবে। বাসায় বা অফিসে প্রবেশের আগে বা বেরুনোর পর হামলা চালানো হবে কেবশিরভাগ ক্ষেত্রে। ১৮ থেকে ৩০ বছরের যুবকরাই এই হামলার ঘটনা ঘটাবে। পোশাক থাকবে- শার্ট, টি-শার্ট ও প্যান্ট। সঙ্গে থাকবে ছোট ব্যাগ। কাছে থাকবে বোমা,আগ্নেয়াস্ত্র ও চাপাতি। হামলায় প্রথমেই ব্যবহার করা হবে ধারালো চাপাতি। আঘাত করা হবে ঘাড়ে ও মাথায়।
টার্গেট কিলিং দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা
গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও অরাজক পরিস্থিতিক সৃষ্টি করা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সার্বিকভাবে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে এই পর্যবেক্ষণে।
সুপারিশ
ধর্মীয় বিধি-বিধা্ন সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো ব্যাপক প্রচার করা। গণমাধ্যম, বেসরকারি সংস্থা ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে দেশব্যাপী গণজাগরণ সৃষ্টি করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যম মনিটরিং, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও রাস্তা-ঘাটে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সাইবার ইন্টেলিজেন্সকে গুরুত্ব দিয়ে অথ্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিশ্বস্ত এজেন্ট ও সোর্স নিয়োগ করা। প্রশাসনে জঙ্গি মনোভাবপন্ন ব্যাক্তিদের অবস্থান চিহ্নিত ও অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। সরকারের গোয়েন্দা তথ্য হ্যাকিং রোধে সর্বোচ্চ সতর্তা নিশ্চিত করা।
ঢাকা জার্নাল, মে ২১, ২০১৬