রাজনীতিশিক্ষা-সংস্কৃতিশীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনামসারাদেশস্পটলাইট

চার দফা দাবি দিয়ে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

ঢাকা জার্নাল রিপোর্ট: 

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জরুরি চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। গতকাল বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই দাবিগুলো উত্থাপন করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। দাবি মেনে নিলে সংলাপের রাস্তা তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেন সারজিস।

শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো হলো—ইন্টারনেট চালু করতে হবে; কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে ও সারা দেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সারজিস আলম বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে শুক্রবার যেন আমাদের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়। তবেই, আমাদের বাকি আট দফা দাবি নিয়ে সংলাপের রাস্তা তৈরি হবে। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করব তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকার এই দাবিগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেনে নিলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের বাবা। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি, আসিফ মাহমুদ গুম হয়েছে। এরপর ঢাকায় এসে প্রতিটি মর্গে আমি খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।

সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কার ছিল একটি অরাজনৈতিক ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের আন্দোলন। সরকার এটিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চেয়েছিল। সরকারবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাজাকারের সন্তানসহ নানা ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এতকিছুর পরেও সুপ্রিম কোর্ট শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলেছে। সে অনুযায়ীই সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা ব্যতীত এই ধরনের প্রজ্ঞাপন সমীচীন নয়। আমরা চেয়েছিলাম সংলাপের মাধ্যমে সকল পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন হবে—যাতে নতুন করে আর কখনো সমস্যা তৈরি না হয়। সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কোটা সংস্কারের চূড়ান্ত সমাধান আমরা চাই।

তিনি আরও বলেন, তবে সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে। তাই কোটাব্যবস্থার সুষম বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে। যেখানে প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কোটার যে কোন পরিবর্তন কমিশনের সুপারিশ সাপেক্ষে হতে হবে। কোটা সংস্কারে আমাদের আরও বক্তব্য আছে, যেগুলো আমরা সংলাপে সরকারের কাছে তুলে ধরতে চাই। কিন্তু তার আগে সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় কয়েকশ লাশ পড়েছে। যার সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা যায়নি। এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোটা সংস্কার চাইনি। আমরা সকল হতাহতের বিচার চাই। আমাদের চূড়ান্ত দাবি, ক্যাম্পাসগুলো খোলার পর সকলের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা জাতির সামনে পেশ করতে চাই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই।

নাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিতর্কিত ও উত্তেজনামূলক বক্তব্য দেন এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যায়ভাবে দমন-পীড়ন ও হামলা-মামলা চালিয়ে একটা রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। যা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। এই অরাজক পরিস্থিতির সুযোগে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন নাশকতা করে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগায় ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। প্রতিবাদী ছাত্র-নাগরিকের সঙ্গে এই ধরনের সহিংস ঘটনার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এটা স্পষ্ট, সরকারের দায়িত্বহীন আচরণ ও দমন-নিপীড়ননীতির জন্য এই অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনজীবনের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে—ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড়াবেন না। আর একটি গুলিও যাতে কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে না ছোড়া হয়। আমাদের সমন্বয়কদের এখনো অনেকের খোঁজ পাচ্ছি না। আমাদের নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করলে আমরা সুস্পষ্টভাবে আমাদের দাবিগুলো সকলের সামনে পেশ করব।