ঘোষণার আগেই ইশতেহার নিয়ে ভোটারের কাছে জাহাঙ্গীর
ঢাকা জার্নাল: আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ইশতেহার ঘোষণা করেননি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম। তবে তার আগেই ভোটারদের কাছে ইশতেহার বিলি শুরু করেছেন তিনি।
গণসংযোগে জাহাঙ্গীর গাজীপুর সিটির উন্নয়নে তার পরিকল্পনা সম্বলিত ইশতেহার ভোটারদের কাছে প্রচার করছেন। তাতে রয়েছে শিক্ষা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক জোন ও শিল্পপার্ক স্থাপন, যোগাযোগ, নগরবাসীর নিরাপত্তাসহ আরও বিভিন্ন বিষয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি উন্নয়নের কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে তার ইশতেহারে রয়েছে, মহানগরের ছেলেমেয়েদের জন্য আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে বিশ্বমানের স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। ওয়ার্ডভিত্তিক আধুনিক গণগ্রন্থাগার স্থাপন করা। গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, সিটি করপোরেশনের চারদিকে বিশেষ করে চিলাই ও তুরাগ নদীর পাশ দিয়ে টঙ্গী, গাছা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, বাসন, কাউলতিয়া, জয়দেবপুর ও পূবাইলসহ সব এলাকাকে সংযোগ করে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। গাজীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইনের ডাবল লেন স্থাপনসহ ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং লাইনের পাশে প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা। সিটি করপোরেশন এলাকায় সিটি বাস চালু এবং ঢাকা পর্যন্ত বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা। যানজট নিরসনে ওয়ার্ডভিত্তিক রাস্তা প্রশস্ত এবং প্রয়োজন অনুসারে নতুন রাস্তা নির্মাণ। টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রয়োজন অনুযায়ী ইউলোপ নির্মাণ করা। মহানগরের শাখা রাস্তাগুলোতে ফুটপাত নির্মাণ এবং বিশেষ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা।
নারী উত্ত্যক্ত ও নগরবাসীর নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি ইশতেহারে বলেছেন, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন; ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ইভটিজিং রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি ওয়ার্ডভিত্তিক মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন, ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যবীমা চালু করা। মহানগরের বাজারগুলোতে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা। সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও নগরের পয়ো:নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণের বিষয়ে গুরুত্ব দেন।
বসবাসের জন্য মহানগরের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আটটি আবাসিক জোন (টঙ্গী, গাছা, কাশিমপুর, কোনাবাড়ী, বাসন, কাউলতিয়া, জয়দেবপুর ও পূবাইল) স্থাপন করা। গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য স্বল্পভাড়ার বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের বিষয়টিও ইশতেহারে প্রাধান্য পেয়েছে।
রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে তা রিসাইক্লিংয়ের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতি ওয়ার্ডে মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়, কবরস্থান, খেলার মাঠ, পার্কিং এবং কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন করার প্রতিও তিনি জোর দেন। মহানগরের কয়েকটি অর্থনৈতিক জোন ও শিল্পপার্ক স্থাপন করার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেছেন জাহাঙ্গীর আলম।
এছাড়া, জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যাপ্ত ড্রেনেজের ব্যবস্থা; করপোরেশনের সব প্রকার সেবা ডিজিটাইজেশন এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা; সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ব্যাংক এবং বীমা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা; ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা; শতভাগ আবাসিক এবং শিল্প স্থাপনায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থা করা; অঞ্চলভিত্তিক আধুনিক ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন; রাস্তার পাশে এবং ফাঁকা জায়গায় বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে সৌন্দর্য্য বর্ধন ও সবুজায়ন করা। নগর এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ; গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন তৈরি; এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন কমিটি গঠনের কথাও ইশতেহারে বলা হয়েছে।
ঢাকা জার্নাল, মে ১, ২০১৮।