সারাদেশ

গৃহকর্ত্রীর সন্তানের খাবার খাওয়ায় শিশু গৃহপরিচারিকাকে হত্যা

রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডে থাকে সাথী পারভীন ডলি। তিন বছর আগে গৃহপরিচারিকা হিসেবে তার বাসায় আনা হয় হেনা নামে এক শিশুকে। সাথীর সন্তানের দেখাশোনো করতো হেনা। মাঝে মাঝে সাথীর সন্তানের খাবার খেয়ে ফেলতো সে। এ কারণে নির্যাতনের করে তাকে হত্যা করে সাথী। এমন অভিযোগে শুক্রবার (৩১ আগস্ট) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যশোর জেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘গত ২৬ আগস্ট সকালে কলাবাগানে সাথীর বাসার দরজা ভেঙে বিছানায় একটি লাশ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, লাশটি সাথীর গৃহপরিচারিকা হেনার। শিশুটির শরীরে নতুন-পুরোনো অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। বাসার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, পা দিয়ে গলা চেপে হেনাকে নির্যাতন করা হতো।

২০২০ সাল থেকে হেনা ওই বাসায় ছিল জানিয়ে মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সাথীর বাসা থেকে তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো সাথী ব্যবহার করতো। পরে কলাবাগান থানা-পুলিশসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এটা নিয়ে কাজ করে। ঘটনার চার দিনের মাথায় আমরা আসামিকে গ্রেফতার করি।’

উপ-পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘কলাবাগান থানা-পুলিশ বিভিন্ন স্থানের ৪০০টি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। কারণ, আসামি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেড়িয়ে গিয়েছিল। এতে গতানুগতিক ধারায় আমাদের তদন্ত করতে হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে তাকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে দেখা গেছে। কখনও মুদি দোকানে, কখনও বিভিন্ন মানুষের ফোন থেকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা গেছে সাথীকে। মূলত আত্মগোপনে থাকার চেষ্টা করে সে। এক পর্যায়ে আমরা খবর পাই ওই নারী যশোরে আছে। পরে কলাবাগান থানা-পুলিশ সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে।’

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘দা-বটি দিয়ে শিশুটিকে নির্যাতন করা হতো। কখনও লাঠি দিয়েও মারা হয়েছে। শিশুটির অপরাধ ছিল সে সাথীর সন্তানের জন্য রাখা খাবার খেয়ে ফেলতো। খেলার সাথী হিসেবে একজন আরেকজনকে মারতো। এ জন্যও হেনাকে নির্যাতন করা হতো।’

গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন না করার অনুরোধ জানিয়ে মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধ করে কেউ পার পায় না।’

আসামির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাথী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের একজন সার্ভেয়ার। ২০০৩ সালে সে প্রথমে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে যোগ দেয়। পরে ডিপ্লোমা করে ২০১১ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি পায়। ২০১৬ সালে বিএসসি পাস করে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও পরিচয় দিতো।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাথীর প্রথম স্বামী ছিলেন একজন ড্রাইভার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে চাকরি করা অবস্থায় তার সঙ্গে বিয়ে হয়। সার্ভেয়ার হিসেবে চাকরি হলে তাকে ডিভোর্স দেয় সাথী। পরে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করে। ২০২০ সালে তাদের ডিভোর্স হয়। এ সময় তাদের দুটি জমজ সন্তান জন্ম নেয়। একটি শিশু মারা যায়, আরেকটি জীবিত রয়েছে। সেই শিশুকে লালনপালন করার জন্যে হেনাকে আনা হয়েছিল।’