কাল মীর কাসেমের চূড়ান্ত রায়
ঢাকা জার্নাল : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিলের চূড়ান্ত রায় মঙ্গলবারের (৮ মার্চ) ১নং কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করবেন। জামাতের শীর্ষ নেতা মীর কাসেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল থাকবে, নাকি তাকে অন্য কোনো সাজা দেয়া হবে তা নির্ধারিত হবে মঙ্গলবারের রায়ের মধ্য দিয়ে।
এদিকে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে কথার উত্তাপ। আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানিকালে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রধান বিচারপতির করা মন্তব্যের জের ধরে এ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এরই মধ্যে খাদ্যমন্ত্রী ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের পুনঃশুনানির দাবি জানিয়েছেন।
খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এ রায় প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই মামলার রায় কী হবে, তা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি। তার বক্তব্যের মধ্যে এটা অনুধাবন করেছি যে, এই মামলায় মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’
কামরুল ইসলাম ছাড়াও অপর এক মন্ত্রীর একই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও মীর কাসেম আলীর প্রধান আইনজীবী সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম আলী। আপিলের শুনানি শুরু হয় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত এ রায়ের দিন ধার্য করেন।
এদিকে মীর কাসেমের মুক্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোড়ন উঠেছে। গণজাগরণ মঞ্চ বলেছে- মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবিতে তারা শাহবাগে অবস্থান নেবে। জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমকে রক্ষার চেষ্টা চলছে বলেও আশঙ্কা তাদের।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মীর কাসেম আলীর মামলাসহ যুদ্ধাপরাধের মামলাগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও তদন্ত সংস্থার অদক্ষতা, অযোগ্যতা এবং দুর্বলতার জন্য তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
এদিকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ে বাইরের কোনো আলোচনার প্রভাব পড়বে না। আদালত মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও যুক্তিসমূহ বিচার-বিশ্লেষণ করে রায় ঘোষণা করবেন।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল মীর কাসেমের আপিলের রায় ঘোষণার জন্য তারিখ ধার্য আছে। আমরা আশা করছি, আগামীকাল আপিলের রায়ে মীর কাসেম চূড়ান্ত দণ্ড পাবে।’ মীর কাসেম আলীর রায় ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সম্প্রতি দুই মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে করে এ রায়ে কোনো প্রভাব পড়বে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাইরের কোনো আলোচনায় এ মামলায় প্রভাব পড়বে না।’
অপরদিকে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ‘আদালত মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে মীর কাসেম আলীর বিষয়ে আগামীকাল যে রায় দেবেন, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে তা মেনে নেবো।’ সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে কোনো অপরাধ ও অপরাধীকে আমরা সমর্থন করি না। তবে আদালতে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেজন্য আইনজীবী হিসেবে আমরা আদালতকে সাহায্য করি। একজন আসামি যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য তাকে আমরা আইনি সহায়তা দিয়ে থাকি। সর্বোচ্চ আদালত আগামীকাল ন্যায়বিচার করবেন বলেই আমি আশা করছি। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন।’
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাগুলোর বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ছয়টি আপিল মামলার চূড়ান্ত রায় এসেছে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের ফাঁসি কার্যকরও হয়েছে। যাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে তারা হলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।
এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি বহাল রেখে ষষ্ঠ আপিল মামলার রায় দেয়া হয়েছে গত ৬ জানুয়ারি। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ সাজা পুনর্বহালের আরজি জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। আর খালাস চেয়ে আসামিপক্ষ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানায়।