শিক্ষা-সংস্কৃতিসব সংবাদ

করোনার সময় সব ফি আদায় করছে ভিকারুননিসা ও কমার্স কলেজ

করোনা মহামারীর সময় বেসরারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তি ফি, টিউশন ফি, সরকারি কর্মচারী ফি এবং অফিসের ইন্টারনেট ফি ছাড়া অন্য কোনও ফি নেওয়ার নির্দেশনা নেই। এমনকি সরকার নির্ধারিত ফি কিস্তিতে নেওয়া এবং দিতে না পারলে বিবেচনা করার নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর নামিদামি প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের নির্দেশ না মেনে সব রকম ফি আদায় করছে।

অভিযোগে জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সময় জুলাই মাসের রশিদে গত ৫ ডিসেম্বর আদায় করা হয়েছে সরব ধরনের ফি। গত ৫ ডিসম্বরের রশিদে দেখা গেছে জুলাই মাসের ১৪ হাজার ৭০০ টাকা টিউশনফি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ডেভেলপমেন্ট ফি নিয়েছে এক হাজার, পরীক্ষার ফি দেড় হাজার, ফেস্টিভ্যাল অ্যান্ড কালচারাল ফি ৩০০ টাকা, গেম অ্যান্ড এনুয়াল স্টোর্টস ফি ২০০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ১০০ টাকা, মিলাদ ফি ১০০ টাকা, বিবিধ ১০০ টাকা এবং সেশন ফি ৩ হাজার টাকা নিয়েছে। জুলাই মাসের রশিদে মোট নিয়েছে ২১ হাজার টাকা। একইভাবে মাধ্যমিক পর্যায়েও আদায় করা হচ্ছে সরকর নির্ধারিত অর্থের বেশি।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কতগুলো ফি আমরা না নেওয়ার জন্য বলেছি। সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে তা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়ট আমি দেখবো।’

ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও অভিভাবক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মজিদ সুজন বলেন, বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি দিতে পারিনি গত কয়েক মাসে। ডিসেম্বরে জুলাই মাসের ভর্তি ও টিউশন ফি দিতে গিয়ে দেখি সব ফি আদায় করা হচ্ছে। স্কুল ও কলেজ পর্যযায়ে সবার কাছ থেকেই আদায় করা হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুর কমার্স কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীর এক শিক্ষার্থীর কাছে জুলাই মাসের টিউশন ফি আদায়ের সময় ভর্তি ফি নিয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রশিদ মূলে জুলাই মাসের টিউশন ফি ছাড়াও কলেজ ডেভেলপমেন্ট ফি আদায় করা হয়েছে দেড় হাজার টাকা, মেডিক্যাল ফি ২ হাজার ৪০ টাকা, লিটারেচার অ্যান্ড কালচারাল ফি ৩২০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৩২০ টাকা, প্রোগ্রেস রিপোর্ট কার্ড ফি ১৬০ টাকা, বিদ্যুৎ ও বিএনসিসি ফি ১৫৫ টাকা। মোট জুলাই মাসে আদায় করা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা।

কারোনার সময় বাড়তি ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর কমার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, যেগুলো আদায় করা হয়েছে সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে সেগুলো পরে সমন্বয় করা হবে। ‘

জানা গেছে একইভাবে রাজধানীর বেসরকারি পর্যায়ের সব ধরনের স্কুল কলেজেই সরকার নির্ধিারিত ফি ছাড়াও অন্য সব ফি নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের অভিভাবকরা জানান, সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ঘর থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যখন বাইরেই বের হচ্ছে না, তখন নেওয়া হচ্ছে খেলাধুলার ফি, মিলাদ ফি, কালাচরাল ফি। প্রতিষ্ঠান বন্ধ অথচ আগের মতেই নেওয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক ফি। বিভিন্ন সংস্থা ও ফাইন্ডেশন পরিচালিত স্কুলেও এমন সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও অন্যন্য ফি নেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে অনেক অভিভাবকরা মৌখিক অভিযোগ করলেও নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনও ফি আদায় করা যাবে না বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এছাড়া অত্যাবশকীয় বেসরকারি কর্মচারি ও কম্পিউটার ফি নেওয়া যাবে। তবে যদি কোনও অভিভাবক চরম আর্থিক সঙ্কটে পতিত হন, তাহলে বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। কোনও শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনও কারণে ব্যাহত না হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নশীল হতে হবে।

এর পর গত ২৫ নভেম্বর ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘যারা নতুন করে ভর্তি হবে তাদের ভর্তি ফি নেওয়া যাবে। তবে ভর্তির সঙ্গে বার্ষিকসহ অন্যান্য ফি নেওয়া যাবে না। আর নতুন ক্লাসে যারা উত্তীর্ণ হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেও বার্ষিক চার্সহ অন্য ফি নিতে পারবে না। তবে করোনার পর যদি স্বাভাবিক অবস্থা আসে তখন যে কার্যক্রম করা সাপেক্ষে ওইসব কার্যক্রমের ফি নিতে পারবে। ’

ওইদিন শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনা মহমারীর কারণে যেসব অভিভাবকদের আয় কমে গেছে তাদের কাছ থেকে কিস্ততি টিউশন ফি আদায় করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া যেসব অভিভাবকরা টিউশন ফি দিতে পারবেন না, তাদের সময় দিতে হবে, সম্ভব হলে মাফ করে দতে হবে। কোনও কারণে যেনও কোনও শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত না হয়। ’