Leadসংবাদ শিরোনামসব সংবাদ

এসআই রতনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

ratonঢাকা জার্নাল:বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিচার বিভাগীয় তদন্তে অভিযুক্ত রাজধানীর আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে এ পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম শেখ হাফিজুর রহমান ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি উল্লেখ করেন।

এর আগে ঢাকার মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক তদন্ত শেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিবেদন মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে জমা দেন। মুখ্য মহানগর হাকিম পরদিন এই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে জমা দেন।

বিচার বিভাগীয় ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসআই রতন কুমার হালদার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই তদন্তে পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনকে নিরপেক্ষ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ দুজনই বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, গত ৩১ জানুয়ারি ওই ছাত্রী আশা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাস শেষ করে ফিরছিলেন। মোহাম্মদপুরের জাপান-গার্ডেন সিটির কাছে আসলে এসআই রতনসহ পুলিশের তিন সদস্য রিকশার গতিরোধ করে ওই ছাত্রীকে একটি দোকানে ঢোকান। এরপর এসআই রতন ওই শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন।

এর আগে একই ঘটনায় তেজগাঁও জোনের পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাবিবুন নবী আনিসুর রশিদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের কাছে রতনের অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যে দোকানে ওই ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, সেই দোকান মালিক নিজেই জানিয়েছেন, তার দোকানে এমন কিছু ঘটেনি। আশপাশের লোকজনও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ দিতে পারেননি। তাই হেনস্তার অভিযোগ থেকে রতন কুমারকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হলো। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসআই রতনের আচরণ ছিল অপেশাদার।

মামলার এজহারে অভিযোগ করা হয়, গত ৩১ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বই কেনার উদ্দেশ্যে শিয়া মসজিদের দিকে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন। পথের মধ্যে জাপান সিটি গার্ডেন ইলেকট্রনিক্স এর উল্টা পাশে আদাবর থানার এসআই রতন কুমার ও পুলিশের দুই কনস্টেবল রিকশার গতিরোধ করে। তিনি রিকশা থেকে নামতে না চাইলেও তাকে জোর করে নামানো হয়। কোনো কিছু বলার আগেই তার কাছে ইয়াবা আছে কি না জানতে চান এসআই। এতে তিনি চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাকে জোর করে শিয়া মসজিদের বিপরীতে একটি ইলেকট্রিকের দোকানে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর এসআই রতন দোকানের সবাইকে বের করে দরজা জানালা লাগিয়ে দেন।

তার কাছে ২০০ পিস ইয়াবা আছে বলে দাবি করেন এসআই রতন। বাদী সেটি অস্বীকার করলে রতন তাকে তার সোয়েটার খুলতে বলেন। তিনি তা অস্বীকার করলে রতন তাকে নিয়ে টানা হেছঁড়া করেন। এ সময় তিনি রতনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখান। তারপরও তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বানানোর অপচেষ্টা করা হয়।

তিনি এসআইকে স্থানীয় লোকদের সামনে ব্যাগ তল্লাশি করতে বলেন। তা না হলে থানায় নিয়ে যেতে। কিন্তু এতে রাজি হননি রতন। এক পর্যায়ে রতন তার সোয়েটার ও ওড়না খুলে ফেলে বাদীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন।

এরপর রতন ওই ছাত্রীকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমার কাছে ওসি-ডিসি কিছুই না, কারো কাছে নালিশ করেও কোনো লাভ নেই।

ঘটনার পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নালিশি মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

ঢাকা জার্নাল,১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.