Leadসংবাদ শিরোনাম

এরশাদের গলায় এখন ঝুলছে সপ্তম সংশোধনীর ফাঁস

download (1)ঢাকা জার্নাল: এরশাদের গলায় এখন ঝুলছে সপ্তম সংশোধনীর ফাঁস। এ সংশোধনীর কারণে পুরাতন তিনিটি মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।

বিশেষ করে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী মামলায় এরশাদ নতুন করে ফাঁসতে পারেন। মঙ্গলবার হঠাৎ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় এরশাদের বিরুদ্ধে সকল মামলা আবারও চাঙা হয়ে উঠতে পারে এমনটা আশংকা করছেন এরশাদের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম।

আশির দশকের নায়ক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বিএনপি সমর্থিত রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে হটিয়ে ১৯৮১ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক কর্মকর্তা হন। তখন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আহসান উদ্দিন চৌধুরী। ১৯৮৩ সালে এরশাদ আহসান উদ্দিনকে সরিয়ে নিজে রাষ্ট্রপিত হন। এরপর শুরু হয় তার ক্ষমতার খেলা।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওই বছরই ১৫৩টি আসনে সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। সংবিধানে ৭ম সংশোধনী এনে সামরিক শাসনকে জায়েজ করে নেন। সংবিধানের ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করেও এরশাদ টিকতে পারেনি। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে তাকে।

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে ২৭ টি মামলা ঠুকে দিয়েছে এরশাদের বিরুদ্ধে। তারপর কমবেশি জেলের ভাত খেতে হয়েছে তাকে। ১৯৯৭ সালে এরশাদ বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। তবে কিছুদিন পর আবার বিএনপি থেকে বেরিয়ে যায়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষের দিকে যখনই আন্দোলন চরম পর্যায়ে তখন বিএনপির সাথে এরশাদের একরকম দফারফা হওয়ার গুঞ্জন ওঠে বিএনপি সেই লোভে এরশাদের ছয়টি মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমুলক বলে তুলে নেয়।

২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আবস্থা জারি হয়। এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে কয়েকটি শর্তে জোট বাধে। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, মহাজোট গঠনের সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মধ্যে একটি গোপন সমঝোতা হয়। সেখানে এরশাদের নামের মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়টিও ছিল।

জানা গেছে, মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৭ মে প্রথম দফায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন এরশাদ। কোনো অগ্রগতি না হলে ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় তিনি স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। তাতেও কাজ না হলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ সরকার আমলে নেতাকর্মীরা কয়েক দফা আন্দোলন করে। এমনকি জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াক আউটের ঘোষণাও দেন তারা। তবে ওয়াক আউট না করলেও কয়েক দফা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে জাপা নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে ১৮টি মামলা আইনের স্বাভাবিক গতিতে নিষ্পত্তি হয়েছে।
এ মামলাগুলো কেন তুলে দেয়া হচ্ছে না এর জবাবে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এটিএন টাইমসকে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী সরকার অনেকের দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করেছিল। কিন্তু দুদক কারো দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহার করেনি আমরা কি করব’।

জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ অভিযোগ করে বলেছেন, এরশাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো তারা আরো আগেই নিষ্পত্তি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরকারপক্ষ অহেতুক বিলম্ব করেছে। এখন সরকারের শেষ সময়ে এসে সেগুলো চাঙ্গা করায় তারা শঙ্কিত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আদালতে ৩টি মামলার কার্যক্রম চলছে। এগুলো হলো:

মঞ্জুর হত্যা মামলা:
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছে প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষ হয়েছে আগামি ২০জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি-তর্ক ।উপস্থাপন শুরু হবে। এ মামলার বিচারিক কার্য়ক্রম প্রায় শেষ আদালত চাইলে শীঘ্র রায় দিতে পারে।এ মামলার

এরশাদের পক্ষের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম এটিএন টাইমসকে বলেন, সরকার ইচ্ছে করেই মামলাটা ঝুলিয়ে রেখেছে এরশাদকে ফাঁদে ফেলার জন্য।

রাডার ক্রয় দুর্নীতী মামলা:
মামলাটি ঢাকার বিভাগীয় বিষেশ জজ আদালতের বিচারক মো.নুরুল ইসলামের আদালতে বিচারাধীন। ১২তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি অ্যাডভোকেট শাহিন ইসলাম। ১৯৯৫ সালের ১২ আগস্ট মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। ১৯৯২ সালের ৪ মে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি দায়েরের পর ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদসহ অপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে ফ্রান্সের থমসন সিএসএফ কোম্পানির অত্যাধুনিক রাডার না কিনে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্টিং কোম্পানির রাডার কিনে সরকারের ৬৪ কোটি ৪ লক্ষ ৪২ হাজার ৯১৮ টাকা আর্থিক ক্ষতি করেছিলেন।
পাঁচ তারকা হোটেল দুর্নীতি মামলা:

হলিডে ইন নামে প্রস্তাবিত পাঁচ তারকাবিশিষ্ট সরকারি হোটেল-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলাটি দুদক বাদি হয়ে কার্য়ক্রম চালাচ্ছে এ মামলার এরশাদের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলাম। এ মামলা এখন হাইকোর্টে স্থগিত অবস্থায় আছে।তবে যে কোনো সময় চালু হয়ে যেতে পারে।
৭ম সংশোধনী মামলা:

১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্য়ন্ত সামরিক শাসনকে বৈধ ঘোষণা করে এরশাদ সংবিধানের ৭ম সংশোধনী আইন পাশ করে। ওই সময়ে মার্শাল ল আদালতে সাজাপ্রাপ্ত জনাব সিদ্দিক আহমেদ ৭ম সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালত ২৬ অগাস্ট ২০১০ সালে ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা দেন। রায়ের ৩০৯ নম্বর প্যারায় বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন,‘সংসদ দণ্ডবিধির ১২৩ক ও ১২৪ক ধারায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ধুলিস্যাৎ করার অভিযোগে আইনি ব্যাবস্থা নিতে পারে। উল্লেখ্য এ ধারার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। রায়ে আরও বলা হয়, ‘সংসদ চাইলে ভবিষ্যতে যাতে কোনো সেনাশাসক সংবিধান স্থগিত করে সামরিক সাশন জারি করতে না পারে সে জন্য আইন পাশ করতে পারে’।

২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে ৭ক অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান অবমাননাকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। যেটা মৃত্যুদণ্ড। এরশাদকে এ বিধানের আওতায় আনা যাবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. আসিফ নজরুল বলেন,‘রেটরোসপেক্টিভ ইফেক্ট দিয়ে এরশাদকে সরকার চাইলে এ আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারে’।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.