শীর্ষ সংবাদসংবাদ শিরোনাম

এবার জার্মান টেলিভিশন চ্যানেলের টক-শোতে রানা প্লাজা!

ঢাকা জার্নাল: সাভারে ভবন ধসের খবর ও ছবি জার্মানিতেও অনেকের মনকে নাড়া দিয়েছে৷ তৈরি পোশাকের আমদানিকারি দেশ ও ভোক্তা হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব নিয়েও চলছে তুমুল তর্ক-বিতর্ক৷ সম্প্রতি জার্মান টেলিভিশনে এক টক শো-তেও বিষয়টির নানা দিক উঠে এসেছে৷

গ্যুন্টার ইয়াউখ-এর টক শো-য় দেখানো হয়েছে, রানা প্লাজার ধ্বংসাবশেষে মৃতদের একটি ছবি, সেখানে পড়ে থাকা পোশাকের স্তূপের মধ্যে একটি ফুল-আঁকা জামা৷ জামাটি জার্মানির ‘কিক’ কোম্পানির দোকানে পাওয়া যায়৷ অনুষ্ঠানের আয়োজক হুবহু সেই জামাটিই কিনেছে৷ দাম প্রায় ১০ ইউরো৷ তার মধ্যে শ্রমিকের পাওনা নাকি মাত্র ১২ সেন্ট৷ অর্থাৎ সেই পাওনা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করলেও দামে তেমন হেরফের হবে না৷ কিন্তু তাদের সেই পাওনা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তার কোনো পথ অবশ্য বাতলে দিতে পারেননি উপস্থিত বক্তারা৷

আরও প্রশ্ন উঠছে, সস্তার এই জামাটি কিনে জার্মান ক্রেতারাই কি বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ক্ষতি করছে না? নাকি দায়-দায়িত্ব আসলে জার্মান কোম্পানি, জার্মান দোকান অথবা জার্মান সরকারের? আরেক দল বলছে, আসল দায় বাংলাদেশের সরকার, প্রশাসন ও তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের৷ তাদের উপর বড়জোর বাইরে থেকে চাপ সৃষ্টি করা যায় বটে, কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়৷

অনুষ্ঠানে উপস্থিত জার্মান উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রী ডির্ক নিবেল মনে করেন, বাংলাদেশের সরকারকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, যাতে তারাই তৈরি পোশাক কারখানার পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারে৷ কারণ অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সরকার কিন্তু সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে পেরেছে৷ তবে বাংলাদেশে দুর্নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন নিবেল৷

রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর যেটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপই দায়ী বলে মনে করেন নারী অধিকার কর্মী গিজেলা বুয়র্কহার্ট৷ যে সব কারখানা শ্রমিকের অধিকার ও মানবাধিকার অমান্য করছে, তাদের পণ্যের উপর শুল্ক চাপানোর প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছে ইইউ৷ ঠিক তারপরই তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক সংগঠনগুলি সক্রিয় হতে দিতে রাজি হয়েছে বাংলাদেশ৷

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন শ্রমিক নাজমা আক্তার৷ তিনি জার্মান দর্শকদের কাছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থার বর্ণনা দেন৷ কোনো এক পক্ষ নয়, গোটা ব্যবস্থাকেই তিনি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন৷

জার্মান পোশাক ব্যবসায়ী সিনা ট্রিংকভাল্ডার বলেন, জার্মানি তথা ইউরোপে দোকানে পোশাক কেনার সময় বোঝার উপায় নেই, সেটি ঠিক কোথায় তৈরি হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে৷ যেমন বাংলাদেশে পোশাক তৈরির প্রায় সব কাজ সেরে ফেলে ইউরোপের কোনো দেশে শেষ পদক্ষেপ নিলেও তার উপর ‘মেড ইন ইউরোপ’ ছাপ পড়ে যায়৷ পোশাক ব্যবসায়ী টোমাস টাংকাই মনে করেন, পুরোটাই টাকার খেলা৷ দক্ষিণ ইউরোপে পোশাক শিল্পকে শক্তিশালী করে তুললে বাংলাদেশের উপর চাপ বাড়বে৷ তখন বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংবাদিক রঙ্গা যোগেশ্বর মনে করেন, রানা প্লাজায় দুর্ঘটনার পর প্রায় ৩০টি পশ্চিমা কোম্পানি মিলে বাংলাদেশে শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়ে ঐকমত্যে এসেছে বটে, কিন্তু তারা সেই বিধিমালা না মানলে শাস্তির কোনো বিধান নেই৷

টেলিভিশন আলোচনায় আরও একটি বিষয় উঠে এলো৷ ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেশ সস্তায় বিক্রি হলেও বাংলাদেশে অনেক ভোক্তা বেশি দাম দিয়ে নিজেদের দেশে তৈরি পোশাক কেনেন৷

এসবি/ডিজি (ইপিডি)

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.