Leadমত-অমতসব সংবাদ

কেন এই রিভার্স এপারথেইড

কট্টরপন্থীরা শৈশব থেকে স্নেহ বঞ্চিত; নাকউঁচু অভিজাত সমাজ তাদের কখনোই মানুষ বলে মনে করেনি বলেই ধর্মীয় বা দলীয় শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সে প্রতিশোধ নিতে চায়; তার আশৈশব বঞ্চনার।
দক্ষিণ এশিয়ার অভিজাত সমাজ অত্যন্ত দাম্ভিক; দরিদ্র মানুষকে বিন্দুমাত্র সম্মান কখনো দেয়নি তারা। বড় জোর করুণা দিয়েছে। এই বাস্তবতায় যেসব শিশু বেড়ে উঠেছে; তার কাছে স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশা করা অবাস্তব।

ধর্মীয় ও দলীয় কট্টরপন্থীদের ‘ঝাঁপিয়ে পড়ে’ সাইবার বুলি করার প্রবণতায় স্বাভাবিকভাবেই ক্রোধ আসে; মানুষ তো কিছুটা ক্রোধ আসবেই। কিন্তু কট্টরপন্থী কেন এমন আচরণ করছে; তা বুঝতে চেষ্টা করাটাও মানবিক। কারণ মানুষটির প্রথম পরিচয় সে মানুষ; তারপর কট্টরপন্থী।

কট্টরপন্থীরা শৈশব থেকে স্নেহ বঞ্চিত; নাকউঁচু অভিজাত সমাজ তাদের কখনোই মানুষ বলে মনে করেনি বলেই ধর্মীয় বা দলীয় শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সে প্রতিশোধ নিতে চায়; তার আশৈশব বঞ্চনার।

দক্ষিণ এশিয়ার অভিজাত সমাজ অত্যন্ত দাম্ভিক; দরিদ্র মানুষকে বিন্দুমাত্র সম্মান কখনো দেয়নি তারা। বড় জোর করুণা দিয়েছে। এই বাস্তবতায় যেসব শিশু বেড়ে উঠেছে; তার কাছে স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশা করা অবাস্তব।

দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ অত্যন্ত বর্ণবাদি। কারো গাত্র বর্ণ ফর্সা বা শ্যামলা না হলেই ‘কালো’ মানুষ হিসেবে সে হাসাহাসির পাত্র যেন। ঠুনকো আভিজাত্যের গর্বে কেবল কালো বলে কাউকে দিনের পর দিন ছোট করলে; তার মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা তৈরি হয়। ফর্সা বা শ্যামলা মানুষ দেখলে তার মধ্যে রিভার্স এপারথেইডের খুন চেপে যায়।

আবার দাড়ি-টুপি-টিকি-চন্দনের ফোটা এসব ধর্মীয় চিহ্ন নিয়ে কথিত আধুনিক সমাজ যে রকম রগড় করে; তাতে তাদের মধ্যেও প্রত্যাঘাতের ইচ্ছা জাগা স্বাভাবিক।

দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় পোশাক- দারিদ্র্য-অনুজ্জ্বল গাত্রবর্ণের কারণে যেসব মানুষ আশৈশব অবহেলার স্বীকার; তারাই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দলীয় শক্তি অর্জন করে আজ মারণ-খেলায় মত্ত।

মনীষীরা ‘সবার উপরে মানুষ সত্য; তাহার উপরে নাই’-এ রকম সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করলেও; দক্ষিণ এশিয়ার কথিত অভিজাত সমাজ সে কথা কখনো কানে তোলেনি। আজ তার ফল পাচ্ছে। অতীতের দরিদ্র-কালো মানুষ’ আজ ধর্মীয় ও দলীয় ক্ষমতায়নের জোরে আজ ক্ষমতা-কাঠামোগুলোতে জায়গা করে নিয়েছে। তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে পদে পদে।

কাজেই মানুষের সঙ্গে আচরণে অত্যন্ত পরিশীলিত হতে হয়। মানুষের ধর্ম-কুসংস্কার-দারিদ্র্য-গাত্রবর্ণ-কেমন দেখতে সে এগুলো নিয়ে কক্ষণো তাকে আঘাত দিতে নেই। প্রত্যেকটি মানুষকে মর্যাদার চোখে দেখতে হয়। যে সমাজ এই সংস্কৃতি রপ্ত করতে পারে; সেখানে শৃংখলা ও সভ্যতার দেখা মেলে।

একজন মানুষ তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আবহের কারণে এমন কথা বলতে পারে; যা আধুনিক সমাজে মানানসই নয়। এর প্রেক্ষিতে তার ওপর রেগে যাওয়া বা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা অনুচিত।

কবি জালালুদ্দিন রুমি বলেছেন, দ্য আর্ট অফ নোয়িং ইজ নোয়িং হোয়াট টু ইগনোর।

এই রুমির কথাই এক সময় চিন্তার জগতে পিছিয়ে থাকা যে মানুষেরা বোঝেননি; সেইসব মানুষের উত্তর-পুরুষই তার কথা বুঝেছেন।

সমাজ বাস্তবতায় ধর্মীয় ও দলীয়ভাবে কট্টর হয়ে যাওয়া লোকটির পরের প্রজন্মই হয়তো আপনার কথাটি বুঝবে। এই যে ধর্ম করে-দল করে লোকটির একটু টাকা হয়েছে; এতে তার সন্তানেরা খেতে পরতে পারছে; অতটা অভাব সন্তানদের নেই; যা পিতা-মাতার ছিলো। ফলে চিন্তা করার সামর্থ্য অর্জন করছে সে।

দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো সম্পদের অপেক্ষাকৃত সুষম বন্টন-সবার জন্য শিক্ষা-স্বাস্থ্যসুযোগ-সামাজিক সুবিচার-আইনের শাসন বিন্দুমাত্র নিশ্চিত করতে না পারায় যে গভীর অসাম্যের ক্ষত সমাজে তৈরি হয়েছে; তারই ফলাফল আজকের অসততা-ভয়ংকর দুর্নীতি-হিংস্রতা-ঘৃণা বিদ্বেষের প্রধান কারণ।

যে শিশু দারিদ্র্য ও দুর্বল সামাজিক অবস্থানের কারণে পিতা-মাতাকে অপমানিত হয়েছে; লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছে সচ্ছল ঘরের শিশুদের আনন্দময় জীবন; তার মাঝে বঞ্চিতের বোধ তীব্র হয়েছে।

ফলে সে ধর্মীয়ভাবে বা দলীয়ভাবে ক্ষমতায়িত হয়ে রিভার্স এপারথেইড ঘটাতে চেষ্টা করছে। জায়গায় জায়গায় তার নতুন ধর্ম-জ্ঞান ও ও নতুন রাজনৈতিক জ্ঞান বিলিয়ে খানিকটা সুপিরিয়রিটির আনন্দ পেতে চাইছে। আশৈশব ইনফেরিওরিটির প্রতিশোধ নিতে চাইছে সে।

সুতরাং সমাজের মধ্যে এই প্রতিশোধস্পৃহার প্রশমন ঘটাতে হবে। কোন কষ্ট বা ভালোবাসাহীনতার কারণে সে চারিদিকে তার আজকের অর্জিত অবস্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে; এমন সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ; সেটা মানবিক মমতায় বিবেচনা করতে হবে।

যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে তার ‘জিরো’ থেকে ‘হিরো’ হবার গল্প বলছে; শুনতে হবে সেটা। যে স্কুলে-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সের কারণে কথা বলার সুযোগ পায়নি; তাকে এখন কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। এটা তার লেট ইয়ুথ; সুতরাং তাকে এটা সেলিব্রেট করতে দিতে হবে।