Leadসব সংবাদ

ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের সব তদন্ত ইউনিট মাঠে

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ঢুকে তার ওপর হামলার ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এই ঘটনা তদন্তে পুলিশের সবগুলো তদন্ত ইউনিট মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের রংপুর বিভাগের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। ওই হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বিকালে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি শনাক্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনাই এখন পুলিশের মূল উদ্দেশ্য। তিনি জানিয়েছেন ওই বাসা থেকে কোনও কিছু চুরি যাওয়ার তথ্য জানা যায়নি। বাসায় দুজন প্রবেশ করেছিল। একজন ছিল পিপিই পরা। তবে সংখ্যাটা দুজন নাকি আরও বেশি তা যাচাই করা হচ্ছে। ওই বাসার সব সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা হবে। মামরার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাকি বিষয়গুলো দেখবেন।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, এটা তদন্ত কমিটির বিষয় নয়, এটা ফৌজদারি অপরাধ। এজন্য সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা হবে। সে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। পুলিশের যত তদন্ত ইউনিট আছে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব সবাই কিন্তু মাঠে নেমেছে। আমাদের এখন মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামি শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

সিসিটিভি ফুটেজে কিছু পাওয়া গেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসিটিভির যেসব ফুটেজ পাওয়া গেছে সেগুলো আমরা কালেকশন করেছি এবং সেগুলো আমরা দেখছি এখন। সেগুলো যাচাই বাছাই করছি। এর বেশি আর কিছু এখন আর বলা যাবে না।

কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখনও কাউকে আটক করা হয়নি। তবে আমরা এখন দেখছি। সবাই কাজ করে যাচ্ছি, সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি। পুলিশের যতগুলো তদন্ত ইউনিট আছে সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছি এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টা দেখা হচ্ছে।

নিরাপত্তা প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশ নিয়ে গেছে। তার কাছ থেকে কিছু জানা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা স্বাভাবিক। তদন্তের জন্য আমরা বিভিন্ন লোককে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। প্রয়োজনের খাতিরে সাক্ষী বা আসামি হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তবে এটা মনে হয় এখনও বলার সময় আসেনি। আর এ ধরনের প্রশ্ন এখন তদন্তের স্বার্থে না করাই ভালো।

ইউএনও-র বাসা থেকে কোনও কিছু চুরি গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এ রকম কিছু দেখতে পাইনি।

এ ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কোন বিষয় জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন এমন কোনও কিছুই মন্তব্য করবো না। তদন্ত শেষ না পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কোনও সন্দেহ হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, আমরা অবশ্যই এখন এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবো না। এখন যদি কোনও মন্তব্য করি সেটা ইমম্যাচিউর মন্তব্য হবে এবং সেটা তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করবে।

ঘটনাটা চুরি ডাকাতির নাকি মেরে ফেলার কী মনে হয়েছে এমন প্রশ্নেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বলেছেন, সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রত্যেকটা বিষয়কে মাথায় রেখেই কাজ করবে।

কোন পথ দিয়ে হামলাকারী ঢুকেছে বা বের হয়েছে তা শনাক্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা আমরা দেখছি। একটা পথ আমরা দেখতে পেয়েছি। অন্য আর কোনও পথ দিয়ে ঢুকেছে বা বের হয়েছে কিনা সেটাও শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।

সিসিটিভি ফুটেজে বাড়ির ভেতরে কয়জনকে দেখতে পেয়েছেন জানতে চাইলে ডিআইজি জানান, ‘বাড়ির ভেতরে দুজনকে দেখতে পেয়েছি। এদের একজন ছিল পিপিই পরা অবস্থায়। তবে সিসিটিভ ফুটেজ আরও যাচাই বাছাই চলছে। যদি আরও কাউকে দেখা যায় তাকেও আমরা আইডেন্টিফাই করবো। আমরা শুধু বলবো, আমরা এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এটি তদন্ত করছি।’

উল্লেখ্য, বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনে ভেনটিলেটর ভেঙে প্রবেশ করে তার ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ভারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে এবং মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আর মেয়েকে বাঁচাতে এলে ওয়াহিদার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখকেও (৭০) জখম করে। এর আগে গেটে দারোয়ানকে বেঁধে ফেলে তারা। গুরুতর আহত ইউএনও ও তার বাবাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ইউএনও ওয়াহিদাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিদেশে নেওয়ার চেষ্টা চললেও তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয় বলে তা সম্ভব হচ্ছে না।