Leadআন্তর্জাতিকসংবাদ শিরোনাম

আসছে সৌরঝড়! পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ

ঢাকা জার্নাল: সূর্যের অভ্যন্তরে সৃষ্ট ঝড়ের কারণে দীর্ঘস্থায়ী ভয়াবহ ক্ষতির হুমকিতে পড়েছে পৃথিবী ও এখানকার জীবন। বিজ্ঞানীরা এই হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, প্রবল এই ঝড় শুরু হচ্ছে সূর্যের উপরিভাগে বিপুল পরিমান অগ্নি উদগীরনের কারণে। আর তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সূর্যের বলয় থেকে ব্যাপক হারে বেরিয়ে আসা আগুনের বিচ্ছুরণ। বিজ্ঞানের ভাষায় যা সিএমই নামেই পরিচিত।

সিএমই সৌরজগতের সবচেয়ে ভয়াবহ একটি ঘটনা। এর ফলে সূর্যের উপরিতলে সৃষ্টি হয় আগুনের বুদবুদ আর তখন সুর্য থেকে ফুটন্ত আগুনের দলা ছুটে ছুটে বের হয়ে আসতে থাকে মহাকাশে। আগুনের এই ফুলকির সঙ্গে সঙ্গে সূর্য থেকে ব্যাপক হারে বের হতে থাকে গামা রশ্মি, রঞ্জন রশ্মি, প্রোটন ও ইলেক্ট্রন।

আর সিএমই’র সঙ্গে যখন এসব রশ্নির বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে তখনই সূর্যে ওঠে ভয়াবহ ঝড়। যার অপরিহার্য প্রভাব দেখা দেয় পৃথিবীর ওপর। পৃথিবীর মাটিতে এবং মাথার ওপর বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনে বাড়তি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ফলে ব্যাপকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইন্টারন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স সোলারম্যাক্সের সদস্য অ্যাশলে ডেল এই সৌরঝড়েরর সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে বার বার সতর্ক করে দিচ্ছেন। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির এই গবেষক বলেছেন, বিশেষভাবে ভয়ঙ্কর ধরনের এই সৌরঝড়ের প্রভাব পৃথিবীর ওপর পড়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

তিনি বলেন, এই ঝড়ের প্রভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ভেঙ্গে পড়বে। বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে পরিবহন, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।

বিদ্যুৎহীন অবস্থায় প্রেট্রোল স্টেশনগুলোতে গাড়ির জ্বালানির জন্য তাদের যুদ্ধ শুরু হবে। পানি ও পয়ঃপ্রণালী ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে মহামারি দেখা দিতে পারে। যেসব রোগ শত শত বছর পেছনে ফেলে আমরা এগিয়েছি, সেগুলোই আবার ফিরে আসতে পারে, বলেন অ্যাশলে ডেল।

এর আগে সবচেয়ে বড় সৌরঝড় হয়েছিলো ১৮৫৯ সালে, যা ইংলিশ জ্যোতির্বিদ রিচার্ড ক্যারিংটনের নামানুসারে ক্যারিংটন ইভেন্ট নামেই পরিচিত পায়। সেবার প্রায় এক ট্রিলিয়ন কিলোগ্রাম উত্তপ্ত সূর্যকণিকা পৃথিবীর বুকে ছিটকে পড়েছিলো সেকেন্ডে তিনহাজার কিলোমিটার গতিতে।

সেসময় এর বড় ধরনের প্রভাব মানুষের ওপর পড়েনি কারণ তখন বৈদ্যুতির উপরিকাঠামো বর্তমান সময়ের মতো এতটা বিস্তৃত ছিলো না। সেসময় মাথার ওপরে ১ লাখ ২৪ হাজার মাইল টেলিগ্রাফ লাইন ছাড়া আর তেমন কিছুই ছিলো না।

‘এটি আর এখন কেবল হুমকি নয়, এটি অনিবার্য একটি বিষয়,’ অ্যাশলে ডেল পদার্থ জগতের এই সবশেষ বিষয়টিকে এভাবেই বলছেন।

নাসার বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন, পৃথিবী প্রতি দেড়শ’ বছরে একবার কেরিংটন লেভেল অতিক্রম করে।

সেই হিসেবে এরই মধ্যে আমরা সম্ভাব্য সৌরঝড়ের সময়ের চেয়েও পাঁচ বছর অতিক্রম করেছি। এবং এখন আগামী এক দশকে সৌরঝড় ঘটার সম্ভাব্যতা ১২ শতাংশ।

গত বছর বিশ্বের ৪০টি শক্তিশালী বিজ্ঞানীদল ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল স্পেস ইউনিভার্সিটিতে সমবেত হন সোলার সুপার-স্টর্ম এর সম্ভাব্য ক্ষতি কতটা কমিয়ে আনা যায় সে নিয়ে আলোচনা করতে।

বিজ্ঞানীদের একটি সাব-গ্রুপ সেবার এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন, মহাকাশ-আবহাওয়ার একটি অগ্রীম সতর্কতা ব্যবস্থা সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে। আর তা সম্ভব করতে তারা সুর্যের আশেপাশে একটি কিউব স্যাটেলাইট পাঠানোর কথা বলেন।

এই স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক কোথায় কখন কতটুকু মাত্রায় সৌর ঝড় উঠতে পারে সে সম্পর্কে অন্তত এক সপ্তাহ আগে বার্তা দিতে পারবে। এতে বৈদ্যুতিক যেসব লাইন ও ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলো বন্ধ করে রাখা সম্ভব হবে। এছাড়াও স্যাটেলাইটগুলো সংরক্ষণ, বিমান উড্ডয়ন বন্ধ রাখা যাবে। প্রতিষেধক কর্মসূচিও হাতে নেওয়া যাবে।

অ্যাশলে ডেলের ভাষায়, এবার সৌর ঝড় এলে পৃথিবীর মানুষ যতটা বিপদগ্রস্ত হতে যাচ্ছে ততটা এর আগে মানব প্রজাতি আর কোনো কিছুতে কোনো কালেই হয়নি।

তবে এটাও সত্য এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করতে হয় সেটিও এখন মানুষ শিখে গেছে।

ঢাকা জার্নাল: আগস্ট ০১, ২০১৪

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.