খেলাস্পটলাইট

আর্জেন্টিনার ১৬ নাকি কলম্বিয়ার ২

ঢাকা জার্নাল স্পোটর্স ডেস্ক: 

আরও একটি ফাইনাল। আর্জেন্টাইনদের সামনে আরও একটি শিরোপা জয়ের হাতছানি। তবে অন্য বারের ফাইনালগুলোর চেয়ে এবারের ফাইনালটা আর্জেন্টাইন ভক্তদের জন্য যেমনই বিশেষ, সেই সঙ্গে তেমনিভাবে হৃদয় বিদারকও বটে। কেননা, এই ম্যাচের মধ্যে শেষ বারের মতো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলবেন আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার আনহেল ডি মারিয়া। 

এছাড়া গুঞ্জন, আগে ফাইনাল ম্যাচের পরে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারেন আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি। যদিও এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি এলএমটেন।

আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে কোপা আমেরিকার ৪৮তম আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। পরিসংখ্যান ও বর্তমান পারফরম্যান্স—সব দিক থেকে কলম্বিয়ার চেয়ে এগিয়ে আলবিসেলেস্তেরা। এই ম্যাচে ফেভারিটও স্কালোনির শিষ্যরা। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচটি করে ম্যাচ খেলেছে দুই দলই। সেখানে সবগুলো ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া।

সেমিফাইনালে নিজেদের চেয়ে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল কানাডাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে আলবিসেলেস্তেরা। অন্যদিকে কোপা আমেরিকার শিরোপার অন্যতম দাবিদার উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে তৃতীয় বারের মতো কোপা আমেরিকার ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ২০০১ সালের চ্যাম্পিয়নরা। সেই সঙ্গে এখন পর্যন্ত টানা ২৮ ম্যাচ অপরাজিত দলও কলম্বিয়া, যার কারণে ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে দিতে হতে পারে কঠিন পরীক্ষা।

পরিসংখ্যান

অতীতের পরিসংখ্যানে চোখ বোলালে দেখা যায় মেসিদের চেয়ে ঢের পিছিয়ে রদ্রিগেজরা। কোপা আমেরিকায় এখন পর্যন্ত উরুগুয়ের সমান মোট ১৫ বার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে আলবিসেলেস্তেরা। মেসিরা ফাইনাল খেলেছেন মোট ২৯ বার। সেই সঙ্গে এই টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।

অন্যদিকে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার কোপার শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় কলম্বিয়া। তাও সেটা ২৩ বছর আগে, ২০০১ সালে। সেবার ফাইনালে মেক্সিকোকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোপার শিরোপা জেতে দলটি। এছাড়া এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে দুই বার ফাইনাল খেলে কলম্বিয়া।

মুখোমুখি

১৯৪৫ সালে প্রথম বারের মতো মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। তাও কোপা আমেরিকার ম্যাচে। সেই ম্যাচে কলম্বিয়াকে ৯-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারায় আজেন্টাইনরা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪২ বার মুখোমুখি হয় এ দুই দল। সেই সব দেখায় কলম্বিয়ার চেয়ে বেশ এগিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

আর্জেন্টিনার ২৫ জয়ের বিপরীতে ৯ জয় কলম্বিয়ার। বাকি ৮টি ম্যাচ ড্র হয়। সবশেষ ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ২-০ গোলে আলবিসেলেস্তেদের বিপক্ষে জয় পান নেস্টর লরেঞ্জোর শিষ্যরা। এছাড়া এ দুই দলের শেষ দেখা হয়েছে ২০২২ সালে। সেই ম্যাচে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।

শক্তি প্রদর্শন

আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। দুই দলই মাঠের খেলায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে থাকে, যার কারণে ফাইনালেও দুই দল চাইবে শারীরিক ফুটবলটা খেলার জন্য, যা এ দুই দলে এবারের আসরের ম্যাচগুলোর দিকে তাকালেও কিছুটা অনুমান করা যায়। এখন পর্যন্ত ৯টি হলুদ কার্ড দেখেছেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। অন্যদিকে আর্জেন্টাইনরা দেখেছেন ৫টি হলুদ কার্ড। তাই বলাই যায়, ফাইনালে শারীরিক ফুটবলটাই খেলবে দুই দল।

ট্রাম্পকার্ড

এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোল আসে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্টিনেজের পা থেকে। এবারের আসরে পাঁচ ম্যাচ খেলে এই ২৬ বছর বয়সী ফুটবলারের পা থেকে আসে ৪ গোল। যদিও সেমিফাইনাল ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন না তিনি। সেই সঙ্গে ২০২৪ ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন ইন্টার মিলানের এই তারকা, যার কারণে ফাইনালে এই স্ট্রাইকারের দিকে বাড়তি নজর থাকবে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের।

এছাড়া আর্জেন্টিনার বিগ ম্যাচের খেলোয়াড় বলা হয় আলহেল ডি মারিয়াকে। আর্জেন্টিনা একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বকাপসহ এখন পর্যন্ত মোট তিনটি শিরোপা জিতেছে। সেই তিন ফাইনালেই গোলের দেখা পেয়েছে ডি মারিয়া। সেই সঙ্গে এই ম্যাচের মধ্য নিয়ে আকাশী-নীলদের জার্সি গায়ে শেষ বারের মতো মাঠে নামবেন ডি মারিয়া, যার কারণে তিনিও এই ম্যাচে নিজের সেরাটা নিংড়ে দেবেন।

অন্যদিকে এবারের আসরে এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি গোলের দেখা পেয়েছেন লিওনেল মেসি। আর বড় ম্যাচে লিওনেল মেসি কী করতে পারেন, সেটা সবারই জানা। অন্যদিকে আলবিসেলেস্তেদের জন্য হুমকি হতে পারেন কলম্বিয়ার অধিনায়ক রদ্রিগেজ। পুরো আসরে দুর্দান্ত আছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৬টি গোলের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় সবার ওপরে তার নাম। এছাড়া ফাইনালে আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষা নিতে পারেন ২৮ বছর বয়সী ড্যানিয়েল মুনেজ। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ২টি গোল করেন তিনি। সেই সঙ্গে পুরো টুর্নামেন্টে ছিলেন দুর্দান্ত। ফাইনালেও সুযোগ পেলে যে আর্জেন্টাইনদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।